স্বাস্থ্য সমস্যা, চাকরি হারানো, আর্থিক সংকট, সম্পর্কে সমস্যা, মহামারিজনিত কারণে ভবিষ্যতে কী ঘটবে, এই সব কিছুকে কেন্দ্র করে মানুষ আত্মহত্যাকে একটি বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। তাহলে কি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এতটাই ঠুনকো? কিন্তু আমরা যেমনটা ভাবছি এই বিষয়টা সেইরূপ নয়, পরিস্থিতি তার অনেক বেশি জটিল, যাকে অনেক সময় ইমোশনাল হাইজ্যাকিং বলা হয়।
যখন আমরা সম্পূর্ণভাবে আমাদের আবেগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকি এবং এর উত্থান-পতনে অভিভূত বা বিরক্ত হয়ে যাই, তখন আমাদের যৌক্তিক চিন্তাভাবনাগুলি আমাদেরকে উদ্ধার করতে আসে না। তখন আমরা এমন কিছু করি, যার জন্য সারাজীবন আফসোস করতে হয়। এটাকে বলা হয় ইমোশনাল হাইজ্যাকিং। এই ইমোশনাল হাইজ্যাকিংয়ের হাত থেকে নিজেকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব সেটাই আপনাকে আজকে আমরা জানাব।
কীভাবে এবং কেন ইমোশনাল হাইজ্যাকিং হয়?
একটি ইমোশনাল হাইজ্যাক এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে অ্যামিগডালা, মস্তিষ্কের অংশ যা আমাদের মানসিক প্রসেসর হিসাবে কাজ করে, যা আমাদের স্বাভাবিক যুক্তি প্রক্রিয়াকে হাইজ্যাক করে বা উপেক্ষা করে। যখন আমরা কিছু চ্যালেঞ্জিং বা মানসিকভাবে উত্তেজিত পরিস্থিতিতে আসি, তখন অ্যামিগডালা সক্রিয় হয়ে যায়। যখন আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজেদের সঙ্গে নেতিবাচক কথা বলি, তখন প্রধানত অ্যামিগডালা ভারী হয়ে যায়। ধীরে ধীরে রাগ বাড়তে থাকে এবং দুঃখ বা হতাশা বিষণ্নতায় পরিণত হয় বা উদ্বেগের রূপ নেয়।
কীভাবে এই ইমোশনাল হাইজ্যাকিং নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
আত্ম-সচেতনতা– আত্ম-সচেতনতা আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি চমৎকার হাতিয়ার। যখন আপনি সচেতন হন, তখন আত্ম-নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনাও বেশি হয়।
আপনার আবেগকে চিহ্নিত করা- আবেগকে সঠিকভাবে বিচার করুন এবং এটি তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে দেখার চেষ্টা করুন। দূর থেকে বিষয়গুলি বিবেচনা করুন। বিষণ্নতাকে আমাদের মানসিক অবস্থাকে অতিরঞ্জিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয় যা বেশিরভাগ সময়ই মানসিক হাইজ্যাকিংয়ের দিকে পরিচালিত করে। অতএব, আপনার আবেগকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করুন।
বিভ্রান্তি- সংবেদনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত চিন্তায় জড়িত হওয়ার পরিবর্তে, নিজেকে বিভ্রান্ত করুন। আপনার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন, কিন্তু এটি সম্পর্কে কথা বলবেন না। দেখা শুরু করুন বা নিজেকে কাজে নিয়োজিত করুন বা বেড়াতে যান। একটু বিভ্রান্তি বিস্ময়কর কাজ করতে পারেন কারণ যৌক্তিক যুক্তি কিছুক্ষণ পরে মাথায় আসে।
মাথা থেকে চিন্তাগুলো বার করুন- বিভ্রান্তির পরে, যা মানসিক সমস্যা বা যে সব চিন্তা ভাবনাগুলো আসছে সেগুলি একটি কাগজে লিখুন বা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন। পরিস্থিতি বুঝে দেখুন পরের বার কীভাবে নিজেকে ভাল ভাবে সামলাতে পারেন। মানসিক বিপর্যয়ের প্রতিটি নতুনত্ব থেকে শিখুন।
বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন- কয়েকটি সেশনে, আপনি বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে আপনার ত্রুটিপূর্ণ প্যাটার্ন এবং ব্ল্যাংক স্পট সম্পর্কে জানতে পারবেন। অনলাইন সেশনগুলি জীবনকে সহজ করে তুলেছে, প্রয়োজনে অনলাইনে কাউন্সেলিং করাতে পারেন৷ এটি জীবন পরিবর্তনের একটি অভিজ্ঞতা এনে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: সাধারণ লবণের পরিবর্তে হিমালয়ান পিংক সল্টকে খাদ্যতালিকায় রাখুন! মিলবে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা