Kissing Disease: চুমু খেলেই ছড়িয়ে পড়ছে চুম্বন রোগ! নয়া এই অসুখের লক্ষণ ও বাঁচার উপায় কী জানেন?
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড করার করার আগে একটু সাবধান! জানলে অবাক হবেন আবেগঘন চুম্বন থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভয়ঙ্কর অসুখ! কীভাবে চিনবেন সেই রোগের লক্ষণ? চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায়ই বা কী?
রাজকুমারী ব্যাঙের ঠোঁটে চুমু খেতেই সে সুদর্শন রাজকুমার হয়ে গেল! কিংবা বেফিকরে ছবিতে বাণী ও রণবীর কাপুর একে অপরকে ৩২ বার চুমু খেয়েছেন হেডলাইন, অথবা ‘ও মমতা ও মেরি জান একটা চুমা দাও না’ বলে তাপস পালের ড্যান্স! আবার জগজিতের আবেগমথিত কণ্ঠে ‘হোটোঁ সে ছুঁ লো তুম’ থেকে সুমনের প্রতিবাদী ‘ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড করো’ স্পর্শ করে ফিফটি শেডস অব গ্রে-এর এলি গোল্ডিং গ্রিনের আবেদনময় ‘কিস মি লাইক ইউ ডু’— সব গল্পে, সব শিরোনামে, গানে শুধু চুমুর জয়গান। ভালোবাসার আবেগঘন বহিঃপ্রকাশ হল চুম্বন (Kissing)। তাইতো নানা রূপে চুমুর অথচ সেই শাশ্বত প্রেমের প্রতীক চুম্বন থেকেই ছড়িয়ে পড়তে পারে অসুখ! এই অসুখের নাম ‘চুম্বন রোগ’ (Kissing Disease) বলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই অসুখকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ‘মনোনিউক্লিওসিস (Mononucleosis ) বা গ্ল্যান্ডুলার ফিভার’। রোগটি মারাত্মক সংক্রামক! এই রোগটি একাধিক ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হতে পারে। তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে অসুখটি মূলত এপস্টাইন বার ভাইরাস (Epstein-Barr Virus) দ্বারা ছড়ায়।
আমেরিকান সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, চুম্বন রোগকে ‘মানব হারপিস ৪’ বলা হয়। হারপিস পরিবারের সদস্য এই ভাইরাস।
কিসিং ডিজিজ কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মানুষের লালার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। চুম্বনের সময় যখন একজন ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তির লালারসের সংস্পর্শে আসেন, তখন এই ভাইরাসটি একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তরুণদের মধ্যে ইবিভি সংক্রমণ বেশি হয়। তবে চুম্বন ছাড়াও এই সংক্রামিত ব্যক্তির শরীর নিঃসৃত যে কোনও তরল পদার্থের সংস্পর্শে অন্য সুস্থ মানুষ এলে তার শরীরেও ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। ইবিভি ভাইরাস কাশি, হাঁচি, রক্ত সঞ্চালন, যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে। এপস্টাইন বার ভাইরাস সাধারণত যুবক এবং কিশোর-কিশোরীদের বেশি প্রভাবিত করে। তবে শিশুরা আক্রান্ত হলেও তাদের উপসর্গ কম থাকে। আবার বয়স্কদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কাও কম থাকে।
মনোনিউক্লিওসিসের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
• জ্বর • ক্লান্তি • মাথাব্যথা • সার শরীরে বেদনা • ঘাড়ে ফোলা ভাব • ফোলা টনসিল • লিভারের বৃদ্ধি • প্লীহা বা স্প্লিন-এর বৃদ্ধি • ফুসকুড়ি
কিভাবে চুম্বন রোগ নির্ণয় করা হয়?
কোনও রোগী এপস্টাইন বার ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এলে চিকিৎসক তার সঙ্গে কথা বলে রোগের ইতিহাস নেন। সাধারণত রোগীর শারীরিক লক্ষণ দেখেই চিকিৎসক মনোনিউক্লিওসিস চিহ্নিত করেন। সাধারণত এই অসুখে লিম্ফ নোডগুলি ফুলে যায়। তাই রোগীর টনসিল, বগলের লিম্ফ নোড ও ঘাড়ের লিম্ফনোডগুলির অবস্থা পরীক্ষা করেন চিকিৎসক। রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। ওই রক্ত পরীক্ষায় যার মাধ্যমে এপস্টেন বার ভাইরাস শনাক্ত করা হয়।
চিকিৎসা
• অসুখটির নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। ভাইরাসঘটিত অসুখ। তাই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা চলে।
• সাধারণত রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বলা হয়। এর ফলে রোগী চট করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন না। শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা অটুট থাকে।
• উপযুক্ত মাত্রায় জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে রোগীর শরীরে জলশূন্যতা রোধ হয়।
• এছাড়া জ্বরের জন্য ওষুধ ও গা হাত পা ব্যথার জন্য ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে।
• গলা ব্যথার জন্য রোগীকে ঈষদুষ্ণ জলে এক চিমটে নুন ফেলে দিনে ৪ থেকে ৫ বার গার্গল করতে বলা হয়। রোগীকে বেশি কথা বলতেও নিষেধ করা হয়।
ইনকিউবেশন পিরিয়ড
সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পরে এই ভাইরাসটি সুস্ত ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড হল ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ।
শরীরে ক্লান্তি, গায়ে হাত পায়ে ব্যথা, জ্বর, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ প্রায় ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। তবে উপসর্গভিত্তিক চিকিযসায় রোগীর উন্নতি হয়।
মনে রাখবেন
চিকিৎসা না করালে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে রোগীর লিভার ও প্লীহার বৃদ্ধি, হার্টৌ সমস্যা, মস্তিষ্কের চারপাশের ঝিল্লির ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ
কোনও ভ্যাকসিন নেই। রোগ এড়াতে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যবিধির দিকে খেয়াল রাখুন। অচেনা কারও মুখ দেওয়া পাত্র ব্যবহার করবেন না বা অন্যদের সাথে খাবার এবং পানীয় ভাগ করবেন না।