তপ্ত গরমে বাড়ির বাইরে বের হলেই হাতের মধ্য়ে কালো ছোপ দেখা যায়? গ্রীষ্মকালে (Summer Season) চামড়ায় ট্যান পড়ে রোদে পুড়ে যাওয়া কোনও অস্বাভাবির ঘটনা নয়। কিন্তু এই সানবার্নকে ((Sunburn) সাধারণ ইস্যু বলে এড়িয়ে যাওয়াও উচিত নয়। ট্যান কারোর বেশি পড়ে, আবার অনেকের তেমন পার্থক্য দেখা যায় না। কিন্তু গ্রীষ্মকালে অধিকাংশের শরীরেই সানবার্ন দেখা যায়। মুখের ত্বকে, মাথার স্ক্যাল্পে, হাত ও পায়ের খোলা জায়গাগুলিতে সানবার্নের উপসর্গ দেখা দিলে উপেক্ষা নয়। বরং ঘরোয়া টোটকাতেই মুসকিল আসান করার চেষ্টা করুন। ভরা গ্রীষ্মে একটানা রোদের মধ্যে কাজ করলে, সৈকতের ধারে অল্প কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে আসা, পুলে বা সমুদ্রের জলে স্নান করলে সবচেয়ে বেশি ট্যানের ছবি ফুটে ওঠে। অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সানবার্ন আসলে কী? সানবার্নে আক্রান্ত কিনা তা বুঝবেন কীভাবে? এর চিকিত্সা কেমন?
খোলা রোদে দীর্ঘসময় কাটানোর ফলে ত্বকে যে প্রদাহ তৈরি হয় তাকেই সানবার্ন বলে। আসলে সূর্যের আলোয় থাকে আলট্রাভায়োলেট এ এবং আলট্রাভায়োলেট বি রশ্মি যা ত্বকের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। রোদ্রে দীর্ঘসময় কাটালে আমাদের ত্বকে মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যায় (মেলানিন নামক রঞ্জকের উপস্থিতির কারণেই আমাদের ত্বকের রং কালো বা বাদাম হয়)। এপিডারমিস নামে ত্বকের উপরের স্তরে, মেলানিনের অতিরিক্ত উপস্থিতি ত্বকে ট্যান তৈরি করে। আর হ্যাঁ, মনে রাখবেন মারাত্মক ধরনের সানবার্ন ডিএনএ-এর পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
সানবার্নের উপসর্গ
• ত্বকের রং হয়ে ওঠে রক্তাভ।
• সানবার্নের অংশে স্পর্শ করলে বোঝা যায় ত্বক কুঁচকে গিয়েছে।
• ত্বক গরম হয়ে গিয়েছে বলে বোধ হয়।
• বারবার ত্বকে চুলকানির সমস্যা তৈরি হয় যা শরীরে অস্বস্তিভাব তৈরি করে।
• ত্বকের উপর ফোসকা তৈরি হতে পারে।
• রোগীর জ্বর আসতে পারে। বমিবমি ভাব দেখা যেতে পারে।
• কমে যেতে পারে রক্তচাপ। ফলে রোগী শারীরিকভাবে দুর্বল অনুভব করতে পারেন।
• ত্বক ফুলে যেতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
• শ্বেতাঙ্গ এবং যাঁদের গায়ের রং হালকা তাঁদের সানবার্নে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি।
• দীর্ঘ সময় বাইরে খোলা রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হলেও হতে পারে সানবার্ন।
• ত্বকের বয়সবৃদ্ধির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে সানবার্ন।
• ফোসকা থেকে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
• সানবার্ন থেকে ত্বকে ক্ষত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
• সানবার্নের সঠিক চিকিৎসা না হলে তা ত্বকের ক্যান্সারের মতো সংস্যার উদ্রেক করতে পারে।
চিকিৎসা
• ঠান্ডা জলে স্নান করলে আরাম মিলবে।
• অ্যালোভেরা ক্রিমে রয়েছে শরীর ঠান্ডা রাখার উপাদান।
• আক্রান্ত জায়াগায় অ্যালোভেরা ক্রিম বা জেল দিলে সাময়িকভাবে আরাম মিলবে।
• মাঝে মধ্যে সানবার্নের সঙ্গে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা যায়। তাই এইসময় প্রচুর জল পানের পরামর্শ দেওয়া হয় রোগীকে।
• অ্যাসপিরিনের মতো অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ওষুধ ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ কোনওমতেই সেবন করা যাবে না।
• মৃদু সানবার্নে ঘরোয়া টোটকা হিসেবে কমলালেবুর খোসা বেটে আক্রান্ত জায়গায় প্রলেপ দিলে খানিকটা আরাম বোধ হতে পারে।
মনে রাখবেন
ত্বক আমাদের শরীরের সবচাইতে বড় অঙ্গ। একইসঙ্গে অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই ত্বকে হওয়া কোনও সমস্যার সঠিকসময়ে চিকিৎসা না করালে তা শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও স্টেরয়েড বা ক্রিম ব্যবহার করলে উপকারের থেকে অপকার বেশি হতে পারে। তাই সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই ওষুধ খাওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Summer fitness tips: ভরা গ্রীষ্মে এক্সারসাইজ? এক্সপার্টের নিয়ম না মানলেই বিপদ