বিষয়টি নিয়ে আজ নয়, গবেষণা চলছে কয়েক বছর ধরেই। বিষয়টি নিয়ে প্রথম একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালে নেচার নিউরো সায়েন্স জার্নালে। সেই গবেষণাতেই বলা হয় গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদের মস্তিষ্ক সাধারণ আকারের তুলনায় সংকুচিত হয়ে যায়। অর্থাৎ মস্তিষ্কে গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ কমে যায়। তবে বিষয়টিকে কিন্তু খারাপ হিসেবে দেখছেন না চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, গর্ভস্থ শিশুর চাহিদা, অনুভূতির বিকাশের জন্যই মায়ের মস্তিষ্কের এই সংকোচন হয়। নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশ্যে এসেছে এই সমীক্ষা। যদিও এই মস্তিষ্কের সংকোচনের প্রভাবের স্থায়িত্ব কতদিন এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছুই জানা যায়নি। গবেষণাটি যে সব মা-বাবাদের উপর চালানো হয়েছিল তাঁদের দুটি এমআরাই করানো হয়। একটি গর্ভাবস্থার আগের এবং অন্যটি গর্ভাবস্থায়। এরপর দেখা যায় গর্ভাবস্থায় মায়েদের মস্তিষ্কের থেকে ধূসর পদার্থ ( Gray Matter)-এর পরিমাণ কমে গেলেও বাবাদের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
গবেষণার সহ-প্রধান লেখক এবং নেদারল্যান্ডসের লেইডেন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ব্রেন সায়েন্টিস্ট এলসেলিন হোয়েকজেমা বলেন, কিছু সময় এরকম হওয়াটা অস্বাভাবিক কোনও কিছু নয়। বরং এক্ষেত্রে তা ভালোর জন্যই হয়। মায়ের মস্তিষ্কে গ্রে ম্যাটার কম হলে তবেই শিশুর নিউরোনের গঠন ঠিক থাকে। অর্থাৎ গ্রে ম্যাটারের সঙ্গে সূক্ষ্ণ যোগসূত্র রয়েছে নিউরোনের। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ল্যাঙ্গোন মেডিক্যাল সেন্টারের স্নায়ুবিজ্ঞানী এই প্রসেসকে ‘স্প্রিং ক্লিনিং’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, শিশুর নিউরোনের সম্পূর্ণ গঠনের জন্যই মায়ের গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ কমে যায়। প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলিকে যাতে উপেক্ষা না করে তার জন্যই এই পরিবর্তন দেখা যায়। আর এই পরিবর্তনের জন্যই মা-শিশুর মধ্যেকার সম্পর্ক ভাল হয়। যদিও বেশ কিছু গবেষণা বলছে, গর্ভাবস্থার ৬ মাস পর মস্তিষ্ক পুনরায় সেই অবস্থায় ফিরে আসে। যে কারণে সন্তানের জন্মের পর মায়েদের মধ্যে স্মৃতিভ্রমের সমস্যা বেড়ে যায়। তবে মস্তিষ্কের সংকোচন খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এতে কারোর কোনও হাত নেই।