বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের মস্তিষ্কের নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে ৬৫ বছরের বয়সি যাঁরা , তাঁদের মধ্যে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ দেখা যায়, যা অ্যালজাইমার নামে বিশেষ পরিচিত। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনধারাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সারা বিশ্বে ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ, বয়স্কদের অ্যালঝাইমারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি এড়িয়ে যাওয়া। প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বজুড়ে অ্যালজাইমার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি, অচরণ ও যোগাযোগ দক্ষতার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তবে এই রোগে শিকার হওয়ার আগে যে যে লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক হোন এখনই।
স্নায়ুর অবক্ষয়ের কারণে অ্যালজাইমার রোগের সৃষ্টি হয়। এই রোগের সঙ্গে স্মৃতিশক্তি ও আচরণ উভয়ই জড়িত। একটি বেসরকারি হাসপাতারে নিউরোলজিস্ট জানিয়েছেন, অ্যামাইলয়েড বিটা ও নিউরোফাইব্রিলারি টাঙ্গেল নিয়ে গছিত সেনাইল প্লেকস জমা হওয়ার কারণে ঘটে। অ্যালজাইমারের প্রাথমিক পর্যায়ে একজন ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি, আচরণের পরিবর্তন দেখা যায় এবং এই সময় একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্মৃতিশক্তি হ্রাস- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল, একজন ব্যক্তিকে অ্যালজাইমারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্মৃতিশক্তি হ্রাস হয়ে যাওয়া। ভুলে যাওয়া কখনও রোগ হয় নায তবে অ্যালজাইমার রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ঘন ঘন দেখা যায়। যেমন যদি কেউ কোনও জায়গায়. যান ও এক থেকে দুজনের মধ্যে ভুলে যায়. বা বাথরুমের মতো পরিচিত জায়গাগুলি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয় বা কোথায় চাবি রেখেছেন, তা ভুলে যান, তাহলে বুঝবনে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই চাবি রাখা বিষয়টি বার বার হলে বেশ উদ্বেগের।
টাকা গণনা করতে সমস্যা- আরেকটি প্রাথমিক লক্ষণ হল, যখন কোনও এক ব্যক্তি মৌলিক কাজ হিসেবে টাকা গুনছেন বা বিল পরিশোধন করছেন, তখন সেই কাজটি তাঁর কাছে অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।
বিচারের সমস্যা- আলজাইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হতে পারে।
বিষন্নতা ও মেজাজ পরিবর্তন- যে ব্যক্তি অ্যালজাইমারে আক্রান্ত তাঁদের মুড বা মেজাজ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয়। মেজাজ ধরে রাখতে না পারার মতো সমস্যা তৈরি হয়। বিষন্নতা অ্যালজাইমার রোগের একটি প্রাথমিক লক্ষণ। আর এমন সমস্যা এই রোগের অনেক আগেই দেখা যায়।
একাগ্রতার সমস্যা- রোগীর স্বাভাবিক কাজে মনোনিবেশ করতে সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু সেই কাজটাই সে আগে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করত।
কানেকশন নিয়ে অসুবিধা- অ্যালজাইমার রোগীর বাক্য গছনের জন্য সঠিক শব্দ খুঁজে না পান না।
অস্থিরতা- আত্মীয়দের চিনতে না পারা, অস্থির হয়ে যাওয়া, বারবার হাঁটাচলা করা, অথবা কোনও কিছু জিনিস নিয়ে বার বার নড়াচড়া করা এগুলি এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। এছাড়া কখনও কখনও তাঁদের হ্যালুসিনেশনও হতে পারে।
তবে উল্লেখ্য, রোগী এই সব সমস্যা সম্পর্কে সচেতন নয়। ছোট ছোট জিনিসগুলি পরিবারকেই লক্ষ্য রাখা উচিত। যদি কেউ প্রিয়জনের এমন কিছু আচরণ দেখতে পারেন, সামাজিক ভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করছে. অবিলম্বে তাঁকে একজন নিউরোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য নিয়ে যান। প্রসঙ্গত, অ্যালজাইমার রোগীর ওষুধ ও থেরাপি ছাড়াও একটি বিশাল সামাজিক ও পারিবারিক সহায়তা প্রয়োজন হয়। কারণ রোগটি যথাসময়ে ছড়িয়ে পড়ে ও রোগী নিজের যত্ন নিতে সক্ষম নাও হতে পারে।
আরও পড়ুন: World Alzheimer’s Day: মস্তিস্কের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কী কী করণীয় তা এক নজরে দেখে নিন…