যখন কোন জন্ম কুণ্ডলীতে রাহু (Rahu) ও কেতুর (Ketu) মধ্যে যদি সমস্ত গ্রহ যথা রবি মঙ্গল বুধ বৃহস্পতি শুক্র এবং শনি স্থান গ্রহণ করে তাকে কালসর্প দোষ বলা হয়।এক কথায় জন্মকুণ্ডলীতে যদি রাহু এবং কেতুর মাঝে সব গ্রহ অবস্থান করে তখন যে দশা হয়, তাকেই বলে কালসর্প যোগ (Kaal Sarp Yoga) বা কালসর্প দশা। যে ব্যক্তির এই যোগ থাকে, তাঁকে সারাজীবন বিভিন্ন দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করে যেতে হয়। শত চেষ্টা করেও তার সেই দুর্ভাগ্যকে জয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। জ্যোতিষ শাস্ত্রে (Astrology) বারো রকমের কালসর্প দোষ আছে। কালসর্প দোষকে খণ্ডণ করতে জ্যোতিষ শাস্ত্রবিদরা নাগপঞ্চমীতে পূজার নির্দেশ দেন। এর সঙ্গে বাড়িতে কালসর্প যন্ত্র টাঙানোর কথাও বলেন। এই বারো রকমের কালসর্প দোষ এর প্রত্যেকটি কিছু সহজ প্রতিকার আছে, সেগুলি আপনি নিজেই খুব সহজে করতে পারবেন।
পৌরাণিক কাহিনি
কালসর্পযোগের পিছনে রাহু ও কেতুর ভূমিকা রয়েছে। পুরাণ মতে, স্বরভানু নামে এক অসুর সমুদ্র মন্থনের কালে অমৃত আস্বাদন করেছিল। তার মুণ্ড ছিন্ন করেন মোহিনীরূপী বিষ্ণু। কিন্তু তার ছিন্নমুণ্ড ও ধড় অমৃতপানের ফলে অমরত্ব লাভ করে। মুণ্ডটি রাহু এবং দেহটি কেতু নামে পরিচিত হয়ে মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াতে থাকে।
পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু, সর্দার বল্লভ ভাই পাটেল, ইন্দিরা গান্ধি ,শচীন তেন্ডুলকারের মত ব্য়ক্তিত্বদের কালসর্প দোষ রয়েছে। তাঁরা সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে একাধিক শুভ কাজ ও ফল পেয়েছেন। তবে সকলেই তো আর বিখ্যাত হোন না, তাই সর্পদোষ থাকলে জ্যোতিষরা সেই দোষ কাটানোর জন্য দিশার আলো দেখান। সর্পদোষ থাকলে,কীভাবে কাটাবেন, তার সংক্ষিপ্ত ও সহজ প্রতিকার দেওয়া হল…
১. প্রতিদিন উত্তর দিকে মুখ করে স্নান করবেন এবং নিজের মাথায় জল ঢালতে ঢালতে ওম নমঃ শিব তরায় নমঃ” এই মন্ত্র বলবেন ৩ বার বা ৯ বার।
২. যে জাতক-জাতিকার জন্ম কুণ্ডলীতে কালসর্প দোষ বর্তমান তারা অবশ্যই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের মাতা পিতা কে প্রণাম করবেন এবং তাদের আশীর্বাদ নেবেন। যদি মাতা পিতা না থাকে তবে মাতা পিতার ফটো তে প্রণাম জানাবেন বা মাতা পিতা স্থানীয় ব্যক্তির কে প্রণাম করবেন।
৩, আপনার শোবার ঘরের বিছানায় ও জানালায় লাল রঙের চাদর ও পর্দা ব্যবহার করবেন।
৪. প্রতিদিন অথবা শনি মঙ্গলবার হনুমানজির পুজা দেবেন এবং হনুমান চালিশা পাঠ করবেন। শনি ও মঙ্গলবার অবশ্যই নিরামিষ আহার কোরবেন।
৫. মাসের যে কোন শনিবার দেবদারু, কালো সরষে ও লোহবান ফুঁটিয়ে স্নানের জলের সাথে মিশিয়ে স্নান করবেন।
৬.শুভ মুহূর্তে দেখে দুইটি রুপোর নাগপাশ তৈরি করে নিয়ে শিব মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গ অর্পণ করবেন এবং পূজা দেবেন।
৭.শনিবার আটা মেখে তার সাথে কালো তিল মিশিয়ে ১০৮ টি গুলি তৈরি করে পুকুরে বা দীঘিতে গিয়ে মাছকে খাওয়াবেন।
৮. কালসর্প দোষ প্রবল হলে কালসর্প রুদ্র দোষ নাশক কবচ ধারণ করবেন। প্রতিবছর নাগপঞ্চমী তে নিজের নামে অবশ্যই পূজা দেবেন।