শিলং : মেঘালয়ে কংগ্রেসের বড় সাফল্য। এবার ঘর ওয়াপসি করতে চলেছেন ১২ জন কংগ্রেস নেতা। মেঘালয়ের ১২ জন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক যাঁরা গতবছরের নভেম্বরে কংগ্রেস ছেড়ে মমতার দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা এবার ফের কংগ্রেসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সূত্র মারফত এমনটাই জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন ওই ১২ বিধায়ক। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ফের মোহভঙ্গ। যদিও এই মোহভঙ্গের কারণ কী, তা এখনও জানা যায়নি। তবে ২০২৩ সালেই মেঘালয়ে ভোট রয়েছে। তার আগে এভাবে ১২ বিধায়ক দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তৃণমূলের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ধাক্কা হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, মেঘালয়ে তৃণমূল ভোটে লড়েনি। ফলে, তাদের শক্তি ছিল কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে আনা নেতারা। গতবছরের নভেম্বর মাসে মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা মুকুল সাংমার নেতৃত্বে ১২ জন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছিলেন। এই নেতাদের উপর ভর করেই মেঘালয়ে পায়ের তলার মাটি শক্ত করছিল তৃণমূল শিবির। কিন্তু ভোটের এক বছর আগে এভাবে ১২ জন বিধায়কই যদি শেষ পর্যন্ত ঘর ওয়াপসি করেন, তাহলে মেঘালয়ে তৃণমূলের কোমর পুরোটাই ভেঙে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে তৃণমূলের সঙ্গে যে মেঘালয়ের ওই ১২ নেতার সম্পর্ক খুব একটা ভাল যাচ্ছিল না, এমন গুঞ্জন বিগত বেশ কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। এমনটাও শোনা যাচ্ছিল, তাঁরা বিজেপির বন্ধু তথা মেঘালয়ের শাসক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টিতেও যোগ দিতে পারেন। তবে এনপিপিতে যোগ দেওয়ার সেই জল্পনা নিজেই উড়িয়ে দিয়েছেন মুকুল সাংমা। ইউএনআইতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী মুকুল সাংমা রবিবারই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনও তৃণমূল বিধায়কই এনপিপির সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন না। তিনি জানিয়েছেন, ” এনপিপির নেতৃত্ব খুবই দুর্বল।” সেই সঙ্গে মুকুল সাংমার আরও অভিযোগ, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্ব মেঘালয়ের উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি হয়েছে।”
কয়েকদিন আগেই মেঘালয়ে তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা চার্লেস পিনগ্রোপ জানিয়েছিলেন, “তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে আদর্শগত দিক থেকে কোনও বিরোধ নেই। দুই দলের নেতৃত্ব চাইলে তৃণমূল ও কংগ্রেস একসঙ্গে কাজও করতে পারে। ” এর পাশাপাশি প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে যোগ দেওয়া ঘিরে যে জল্পনা ছড়িয়েছে, সেই সিদ্ধান্তকেও একটি ভাল পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন মেঘালয়ের তৃণমূল সভাপতি পিনগ্রোপ। বলেছিলেন, “কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাঁকে ( প্রশান্ত কিশোর) দলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় এটি একটি ভাল পদক্ষেপ। গ্রহণযোগ্য বিরোধী শক্তি হিসেবে এত বিশাল সংখ্যায় আর কোনও দলই উঠে আসতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে আরও আসন জেতা এবং সমমতসম্পন্ন দলগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে পারলে আরও সুবিধা হবে। সেই কারণেই প্রশান্ত কিশোরকে দরকার কংগ্রেসে।”
উল্লেখ্য, আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে তৃণমূলকে এখন নির্বাচনী ময়দানে শক্তি প্রদর্শনের দিক থেকে কাঁটায় কাঁটায় টক্কর দিচ্ছে আম আদমি পার্টি। পঞ্জাবের ক্ষমতার দখল নিয়েছে। গোয়াতেও বিধায়ক পেয়েছে। অসমের পুরভোটেও খাতা খুলে ফেলেছে কেজরিওয়ালের দল। সেই জায়গায় তৃণমূল সুপ্রিমো হিসেবে তথা বিরোধী নেত্রী হিসেবে গোটা দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাদা কদর থাকলেও দলগত ভাবে ভিন রাজ্যে গিয়ে সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারছে না তৃণমূল। তার উপর যদি সত্যিই মেঘালয়ের ১২ বিধায়ক কংগ্রেসে ফিরে যান, তাহলে সেখানেও কার্যত আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে তৃণমূলকে।