বেঙ্গালুরু: ভগত সিংয়ের ফাঁসির দৃশ্যের মহড়া দিতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাল কর্ণাটকের এক ১২ বছরের কিশোর। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) কর্নাটকের রাজ্যোৎসব উপলক্ষে একটি নাটক হওয়ার কথা ছিল। নাটকে স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং-এর প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের করার কথা ছিল সঞ্জয় গৌড়া নামে ওই কিশোরের। শনিবার, রাতের দিকে যখন বাড়িতে কেউ নেই, সেই সময়ে সে একা একা ভগত সিং-এর ফাঁসির দৃশ্যের মহড়া দিতে গিয়েছিল। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এরকম কোনও নাটক স্কুলে হওয়ার কথা ছিল না, বা সঞ্জয়কে ভগৎ সিং-এর চরিত্রও দেওয়া হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে সঞ্জয় গৌড়া বেঙ্গালুরুর এসএলভি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাড়ি চিত্রদুর্গ জেলায়। শনিবার রাতে নাটকের মহড়া দেওয়ার সময় তার অভিভাবকরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না, সঞ্জয় একা ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং-এর ফাঁসির দৃশ্য করার চেষ্টা করার সময়, দুর্ঘটনাক্রমে তার মৃত্যু হয়।
বাদাভানে থানার সাব-ইন্সপেক্টর কে আর গীতাম্মা জানিয়েছেন, তার বাবা-মা একটি চায়ের দোকান চালান। শনিবার রাত ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে তারা বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। ঘরটি ভিতর থেকে বদ্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাঁরা এবং তাঁদের প্রতিবেশীরা দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন। কোনও সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীরা জানালা দিয়ে দেখেছিলেন, সঞ্জয় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এরপর দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে সঞ্জয়ের দেহ উদ্ধার করে তার বাবা-মা দ্রুত এক নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তাকে বাঁচানো যায়নি।
সঞ্জয়ের বাবা নাগরাজের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাজ্যোৎসব উদযাপন উপলক্ষে স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য একটি নাটকে ভগত সিং-এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল সঞ্জয়ের। গত কয়েকদিন ধরেই এই নাটকের মহড়া দিচ্ছিল সে। শনিবার সন্ধ্যায় ফাঁসির দৃশ্যের মহড়া দিতে গিয়ে, তার গলায় দড়ির ফাস এঁটে বসেছিল। তবে, ছেলের মৃত্যু একেবারেই “দুর্ঘটনাবশত” বলে জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার জন্য তিনি কাউকে দায়ী করেননি।
নাগরাজ বলেন, “আমার ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ভূমিকা নিত। স্কুল কর্তৃপক্ষ ওকে ভগৎ সিং-এর ভূমিকায় অভিনয় করতে বলেছিল। সঞ্জয় নিজেই পোশাক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করেছিল। আমি এবং আমার স্ত্রী ডিসি অফিসের কাছে একটি চায়ের দোকান চালাই। প্রতিদিন ও সেখানে আসত। কিন্তু শনিবার সে তা করেনি। রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফিরে দেখি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ও খাটের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাকে দ্রুত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসার পর ওকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”
সঞ্জয় যে এসএলভি হাইস্কুলের ছাত্র ছিল, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, ছাত্রদের কাউকেই ভগৎ সিংয়ের ভূমিকা অভিনয় করতে বলা হয়নি। কর্ণাটক রাজ্যোৎসব উপলক্ষে আগ্রহী ছাত্রদের একটি অভিনব-পোশাক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কন্নড় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিকাশে অবদান রেখেছেন এমন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের ভূমিকায় অভিনয় করতে বলা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, “সঞ্জয় গৌড়া একজন উজ্জ্বল ছাত্র ছিল। পড়াশোনা এবং পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে সে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। তার মৃত্যুতে পুরো বিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা যে রাজ্যোৎসব দিবসের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিলাম, তা ছিল কন্নড় সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ভগত সিং থিম-এর অংশ ছিলেন না। সঞ্জয় সম্ভবত নিজে থেকেই ভগৎ সিং-এর ভূমিকা বেছে নিয়েছিল।”