লখনউ: দাগী মাফিয়া থেকে সফল রাজনীতিবিদ, তারপর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। শেষে শনিবার (১৫ এপ্রিল) আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন আতিক আহমেদ। উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে, এমনকি কারাবন্দি অবস্থাতেও দারুণ প্রভাব ছিল তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা এবং অপহরণের মতো গুরুতর অপরাধ-সহ ১০০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এরপর, গত শতাব্দীর নয়ের দশক এবং চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকের গোড়ার দিকে, উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে বড় নাম হয়ে উঠেছিলেন। পাঁচ মেয়াদের বিধায়ক, সমাজবাদী পার্টির টিকিটে একবার লোকসভার সাংসদও হয়েছিলেন আতিক। জেনে নেওয়া যাক গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ব্যক্তির বর্ণময় জীবন সম্পর্কে –
১১০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি
উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী রাজেশ্বর সিং জানিয়েছেন, আতিকের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ১০০টি এফআইআর ছিল। ৫৪টি ক্ষেত্রে বিচার চলছিল। কিন্তু, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাক্ষীর অভাবে মামলাগুলি ঝুলে ছিল। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১৪৪ জন সদস্য নিয়ে নিজের গ্যাং তৈরি করেছিলেন আতিক। তাঁর এমনই দাপট ছিল যে, ১০ জন হাইকোর্টের বিচারপতি তাঁর মামলার শুনানি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ১১,০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বানিয়েছিলেন।
১৮ বছরে প্রথম হত্যার মামলা
তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম ফৌজদারি মামলা হয়েছিল ৪৪ বছর আগে, ১৯৭৯ সালে। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। ওই অল্প বয়সেই তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর আতিক প্রয়াগরাজ (সেই সময় নাম এলাহাবাদ) এবং উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশে তোলাবাজি এবং জমি দখলকারী সিন্ডিকেটের মাথা হয়ে উঠেছিলেন।
অপরাধ জগৎ থেকে রাজনীতির ময়দানে
অপরাধ জগতের শীর্ষে থাকাকালীনই রাজনীতিতে পা রাখেন আতিক। ১৯৮৯ সালে এলাহাবাদ পশ্চিম নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন তিনি। পরে একই আসন থেকে সমাজবাদী পার্টি এবং আপনা দলের টিকিটে জয়লাভ করেন। ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ফুলপুর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জয় পান তিনি। যে লোকসভা আসন থেকে একসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন খোদ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।
পতনের শুরু
২০০৫ সাল থেকেই তাঁর পতনের শুরু হয়েছিল বলা যায়। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএসপি বিধায়ক রাজু পালের হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে উঠে এসেছিল আতিকের নাম। পরের বছরই রাজু পাল হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী উমেশ পালকে অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন তিনি। এর দুই বছর পর, ২০০৮ সালে আতিক আহমেদ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তারপরই সমাজবাদী পার্টি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল।
ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি আতিক
তবে এখানেই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়নি। জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০১৪ এবং ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আতিক। কিন্তু জিততে পারেননি। এর মধ্যে আবার, ২০১৭ সালে এক হামলার মামলায় গ্রেফতার হন আতিক। কিন্তু, কারাগারে থাকা অবস্থাতেও আরও একটি অপহরণ করেছিলেন তিনি, এমনই অভিযোগ উঠেছিল। যার জেরে ২০১৯ সালে তাঁকে উত্তর প্রদেশের কারাগার থেকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্থানান্তরিত করা হয় আহমেদাবাদের সবরমতি কারাগারে। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি আতিক। শনিবার, থেমে গিয়েছে এই গ্যাংস্টার তথা রাজনীতিবিদের জীবন।