নয়া দিল্লি: দিল্লির পথ দুর্ঘটনায় (Delhi Horror) ২০ বছর বয়সী অঞ্জলি সিংয়ের মৃত্যুর ঘটনা সাড়া ফেলেছে প্রায় গোটা দেশেই। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী (Delhi CM) অরবিন্দ কেজরীবাল (Arvind Kejriwal) তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এই ঘটনার। এই ঘটনাকে বিরল থেকে বিরলতম আখ্যা দিয়ে তিনি দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতম সাজার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে অঞ্জলির মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে সুলতানপুরী পুলিশ স্টেশনে গতকাল জড়ো হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ রাস্তাও অবরোধ করে রাখেন। এই রাজধানীতে এতটাই আলোড়ন ফেলেছে যে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে দিল্লি পুলিশের কাছে এই ঘটনার রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। এই আবহে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য় উঠে এসেছে পুলিশের কাছে। দোষীরা স্বীকার করে নিয়েছে যে তারা এই দুর্ঘটনার মুহূর্তে মদ্যপ অবস্থায় ছিল। আর ধার করা গাড়িতে করেই বর্ষবরণের রাতে পার্টিতে বেরিয়েছিল তারা।
২০ বছর বয়সী অঞ্জলি সিং (Anjali Singh) আমান বিহারের বাসিন্দা। বাবা বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন মা, চার বোন ও দুই ভাই। ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় তিনিই। একা হাতে নিজেই সংসার চালাতেন অঞ্জলি। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী তিনিই। আর সেই অঞ্জলিকেই অকালে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হল কিছু অসংবেদনশীল মানুষদের জন্য। দুর্ঘটনার দিন রাত ২ টোয় অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তরুণী। সেই সময়ই ঘটে গেল এত বড় বিপত্তি। তাঁর স্কুটিতে এসে ধাক্কা মারে একটি মারুতি সুজুকি বেলেনো। তারপর তাঁর শরীর ওই গাড়ির নীচে জড়িয়ে যায়। সেই অবস্থাতেই বেহুঁশের মতো তাঁকে টেনে হিঁচড়ে প্রায় ঘণ্টা খানেক নিয়ে যায় ওই গাড়িটি। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১২ থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নগ্ন দেহ উদ্ধার হয় তরুণীর।
এই ঘটনার ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে তিনদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির এক আদালত। তদন্ত চলছে দিল্লি পুলিশের অধীনে। তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তদন্ত চলাকালীন পুলিশ জানতে পেরেছে ঘাতক গাড়িটি দুইবার ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, এই পাঁচজন ভাড়া করা গাড়িতে চেপে এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। গাড়ির আসল মালিক লোকেশ। তিনি আশুতোষ নামের এক ব্যক্তিকে এই গাড়ি ধার দিয়েছিলেন। আর আশুতোষ দিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু অমিত ও দীপক খান্নাকে। দুর্ঘটনার মুহূর্তে দুই খান্নাই গাড়ির ভিতর ছিল। সেই সময় গাড়িতে উপস্থিত ছিল মনোজ মিত্তল নামের এক বিজেপি নেতা যিনি একটি রেশন দোকানের মালিক। কন্নৌট প্লেসে স্প্যানিশ কালচারাল সেন্টারে কর্মরত কৃষাণ এবংস হেয়ার ড্রেসার মিঠুন। এই পাঁচজনই আপাতত পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।
এদিকে পুলিশের এফআইআর থেকে জানা গিয়েছে, গাড়ির নম্বর প্লেট থেকে অপরাধীদের নাগাল পেতে চেয়েছিল পুলিশ। আর সেই খোঁজেই লোকেশের সঙ্গে কথা হয় পুলিশের। তিনি জানান, তিনি আশুতোষকে গাড়ি ধার দিয়েছিলেন। পরে আশুতোষ খান্নাদের বিষয়ে জানান। তিনি জানিয়েছেন, বর্ষশেষের দিন বিকেলবেলায় তাঁর থেকে খান্নারা গাড়ি নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আশুতোষ দীপক ও অমিত খান্নাদের ফোন করেন। তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করে নেয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল দীপক এবং তার পাশেই বসেছিল মনোজ মিত্তল। দীপক জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে জন্টি গ্রামের কাছে গাড়ি থামানো হয়। সেই সময় তারা খেয়াল করে যে তরুণীর দেহ গাড়ির নীচে আটকে পড়েছে। ভয়ে পেয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আর আশুতোষের বাড়িতেই গাড়িটি রেখে আসে। তবে অপরাধ করে রেহাই পাবে না পাঁচ দোষীই। এই গোটা ঘটনার তদন্তভার দিল্লি পুলিশের বর্ষীয়ান আধিকারিক শালিনী সিংহের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এবং গোটা তদন্তের রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানোর নির্দেশ এসেছে।