ভোপাল: মধ্য প্রদেশের রাজধানী ভোপালের এক গার্লস হোম থেকে গায়েব ২৬টি মেয়ে। ভোপালের পারওয়ালিয়া থানা এলাকায় অবস্থিত এই শিশু নিবাসে, বিভিন্ন রাজ্যের মোট ৬৮টি মেয়ে থাকে বলে নিবন্ধন করা হয়েছে। যাদের বয়স ৬ থেকে ১৮-র মধ্যে। কিন্তু, সম্প্রতি হোমে গিয়ে মাত্র ৪১ জন মেয়ের সন্ধান পান জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের কর্তারা। ২৬ জন মেয়ের কোনও খোঁজ নেই। এই মেয়েরা এখন কোথায় আছে, তার কোনও তথ্য কারও কাছে নেই। এমনকি, হোমে ওই মেয়েদের কোনও রেকর্ডও নেই। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ওই গার্লস হোম চালানো হচ্ছিল। এমনকি, গার্লস হোম চালানোর কোনও লাইসেন্সও তাদের ছিল না। হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, গোপনে ওই মেয়েদের ধর্মান্তরিত করার অভিযোগও উঠেছে।
আঁচল মিশনারি অর্গানাইজেশন নামে এক খ্রিষ্টীয় সংস্থা ওই শিশু গার্লস হোম। গুজরাট, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, এবং মধ্য প্রদেশের সিহোর, রাইসেন, ছিন্দওয়াড়া, বলাঘাট এবং বিদিশা থেকে মেয়েরা এই গার্লস হোমে থাকে। সম্প্রতি, এই হোমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্কা কানুনগো মধ্য প্রদেশের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে, ২৬ মেয়ে আবাসিকের নিখোঁজ হওয়ার খবরটা জানান। তাঁর অভিযোগ, হোমের কর্তা ও সেখানকার শিশুদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন, গার্লস হোমটি নিবন্ধিত নয়, অর্থাৎ, এটির কোনও সরকারি স্বীকৃতি নেই।
কোনও মেয়েকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করার পর, তাকে প্রথমে শিশু কল্যাণ কমিটির সামনে উপস্থিত করতে হয়। কিন্তু, ওই হোমে শিশুদের রাস্তা থেকে উদ্ধারের পর, শিশু কল্যাণ কমিটির সামনে হাজির না করেই সেখানে রাখা হচ্ছে। গার্লস হোমের কর্তৃপক্ষ নাকি জানতই না যে, সেখান থেকে ২৬ জন মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, এই বিষয়ে তারা পুলিশে কোনও অভিযোগও দায়ের করেনি। প্রিয়াঙ্কা কানুনগো এই বিষয়ে পুলিশি হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে নথিসহ কমিশনে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরই এই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে স্থানীয় পুলিশ।
এদিকে, রাজ্য শিশু কমিশনের সন্দেহ, ওই হোমে শিশুদের ধর্মান্তরিত করা হত। অভাবী শিশুদের রাস্তা থেকে উদ্ধার করে হোমে নিয়ে এসে, তাদের ধর্মান্তরিত করত খ্রিস্টান মিশনারি সংস্থাটি। যদিও পুলিশ এখনও ধর্মান্তরকরণের ধারায় কোনও অপরাধ নথিভুক্ত করেনি। পুলিশ সুপার বলছেন, প্রমাণ পাওয়ার পর ধারা বাড়ানো যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ভোপালের পারওয়ালিয়া থানা এলাকায় বিনা অনুমতিতে পরিচালিত এক শিশু নিবাস থেকে ২৬ জন মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা আমার নজরে এসেছে। বিষয়টির গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”