জয়পুর: বুধবার থেকেই নিখোঁজ ছিল তিন বোন। খোঁজ মিলছিল না তাঁদের চার বছর ও ২২ দিনের সন্তানেরও। শনিবার সকালে বাড়ির পাশের কুয়োতে উকি মারতেই আতঁকে উঠলেন প্রতিবেশীরা। ভিতর থেকে জল নয়, বালতিতে ঠেকল অন্য কিছু। দেখলেন, ভিতরে ভাসছে একটা বা দুটো নয়, একাধিক দেহ। একসঙ্গে তিন বোন ও তাদের দুই সন্তানের দেহ উদ্ধারকে ঘিরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের জয়পুরে। শনিবার সকালে ডুডু নামক একটি গ্রামের কুয়ো থেকে একসঙ্গে পাঁচজনের দেহ উদ্ধার হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে তিনজন সম্পর্কে বোন হয়। এক পরিবারেই বিয়ে হয়েছিল তাদের তিনজনের। যে দুটি শিশুর দেহ উদ্ধার হয়েছে, তারা বড় বোনের সন্তান। একজনের বয়স চার বছর, অপর জনের বয়স মাত্র ২২ জন। বাকি দুই বোনও ৮ ও ৯ মাসের গর্ভবতী ছিল বলে জানা গিয়েছে। মৃত ওই তিনজনের নাম কালু মীনা (২৫), মমতা মীনা (২৩) ও কমলেশ মীনা (২০)।
ইতিমধ্যেই মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে। মৃতাদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধেই পণের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে, গত ২৫ মে ছোট বোন কমলেশ তাঁর বাবাকে ফোন করে এবং জানায় যে, তিন বোনকেই তাঁদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা মারধর করছে। নিজেদের প্রাণহানির আশঙ্কাও প্রকাশ করে তাঁরা।
এরপরই ওই ব্যক্তি মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে হাজির হন। সেখানে গেলে শ্বশুরবাড়ির সদস্য সহ ৫-৭ জন তাঁকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন এবং বলেন যে তাঁর মেয়েরা মরে গিয়েছে, তাঁরা আর কিছু জানেন না, উনি যেন এখনই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপরই ওই ব্যক্তি থানায় গিয়ে তিন মেয়ে ও তাদের দুই সন্তানের নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁর তিন মেয়ের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরাই পরিকল্পনা করে মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের খুন করেছে।
বিষয়টি সমাজকর্মীদের নজরে আসতেই তারাও গোটা ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিসের প্রতিনিধি কবিতা শ্রীবাস্তব বলেন, “পাঁচজন নয়, সাতজনেরই হত্যা করা হয়েছে। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই দুই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এই জঘন্য অপরাধের জন্য কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের কারণেই ওই তিন মহিলা ও তাদের সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় পুলিশের বদলে উচ্চপদস্থ কোনও পুলিশকর্তার হাতে গোটা বিষয়ের তদন্তভার দেওয়া উচিত।”
স্থানীয় পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা বলে মনে করা হলেও, ময়নাতদন্তের পরই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। মৃতাদের মধ্যে একজন নিখোঁজ হওয়ার আগেরদিন রাতে হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, এর থেকে মরে যাওয়া শ্রেয়। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মৃতাদের শ্বশুরবাড়ির কয়েকজন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।