লখনউ: ডেঙ্গুর দাপাদাপিতেই কি কুপোকাত যোগীরাজ্য? বিগত দুই সপ্তাহ ধরেই হু হু করে বাড়ছে অজানা জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। সকলের উপসর্গই প্রবল জ্বর, শরীরে জলের মাত্রা কমে যাওয়া ও প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া। ফিরোজাবাদে অজানা জ্বরে বিগত ১০ দিনেই ৪৫টি শিশু সহ মোট ৫৩ জনের মৃত্যু হওয়ায় বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দিল উত্তর প্রদেশ সরকার।
সারি সারি রোগী শুয়ে রয়েছে মেঝেতে, অধিকাংশই শিশু। হাসপাতালগুলিতে ফাঁকা নেই বেড। সন্তানদের সুস্থ করার আশায় পাগলের মতো ছোটাছুটি করছেন অভিভাবকরা। এমনই দৃশ্য ধরা পড়ছে ফিরোজাবাদ, আগ্রা সহ উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশের একাধিক জায়গায়। দু-তিনদিনের জ্বরেই মৃত্যু হচ্ছে ছোট বাচ্চাদের। একবার জ্বরে পড়লে সুস্থ হতে সময় লাগছে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ। শিশুদের ক্ষেত্রে সময়টা আরও বেশি।
ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও প্রথমে চিকিৎসকরা এই অজানা জ্বরকে ডেঙ্গু বলে মানতে চাননি। কিন্তু সম্প্রতিই বেশ কয়েকটি ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেবল ফিরোজাবাদেই ১৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, আক্রান্তের অধিকাংশই শিশু। এদিকে, জ্বরের প্রকোপ বাড়তেই জেলাশাসক চন্দ্র বিজয় সিং ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর অবধি সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবারই ফিরোজাবাদের পরিস্থিতি যাচাই করে দেখতে সেখানে যান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেন, “মেডিক্যাল কলেজগুলিকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্যও যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ তদন্তকারী দল পাঠানো হচ্ছে। এত সংখ্যক রোগীদের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে দেখবে তারা।”
মুখ্যমন্ত্রী ফিরোজাবাদ মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি অজানা জ্বকে মারা গিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেছেন। বিধায়ক মনীশ আসিজা জানান, রোগী পরিবারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং পরিস্থিতির উপরও কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
গত ১৮ অগস্ট প্রথম অজানা জ্বরে আক্রান্তের খোঁজ মেলে। এক সপ্তাহেই সেখানে ৪০ শিশু সহ মোট ৬৮ জনের মৃত্যু হয়। কেবল রবিবারেই ফিরোজাবাদে ১২জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মূলত ডেঙ্গু জ্বরের মতো উপর্সগ থাকলেও অনেক সময়ই রিপোর্টে তা ধরা পড়ছে না। মূলত রাতে জ্বর আসছে, সকালের মধ্যেই এতটা শারীরিক অবনতি হচ্ছে যে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে রোগীদের। জ্বরের পাশাপাশি শরীরে জলের মাত্রা কমে যাওয়া ও প্লেটলেটের সংখ্যাও ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। অধিকাংশ হাসপাতালেই জায়গা মিলছে না। ব্লাড ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারও খালি হয়ে এসেছে প্রায়।