দেশের নীতি কি বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া ঠিক করবে? ডিজিটাল নীতিতে প্রশ্ন একাংশের

দিল্লি হাইকোর্টে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, কেন্দ্রের এই নতুন নির্দেশিকা ভারতীয় সংবিধানেরই বিরুদ্ধে।

দেশের নীতি কি বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া ঠিক করবে? ডিজিটাল নীতিতে প্রশ্ন একাংশের
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 26, 2021 | 11:16 PM

জ্যোতির্ময় রায়: বাক-স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় বাহক এখন সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) প্ল্যাটফর্ম। প্রতিটি দেশের তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আছে। ভারতবর্ষে উপলব্ধ অন্যান্য বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তার মধ্যে জনপ্রিয় হল ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বাক-স্বাধীনতার নামে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, সামাজিক কুৎসা এমনকি রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য দেশের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। তাই চলতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করে। কেন্দ্রীয় সরকার নয়া নির্দেশিকার মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াকে এক ছাদের তলায় আনতে চেয়েছিল। এই নির্দেশিকায় কেন্দ্র জানিয়েছিল, সোশ্যাল মিডয়াগুলিকে নিজেদের তথ্য সরকারকে দিতে হবে। নতুন নির্দেশিকা বাস্তবায়নের জন্য সরকার এই সংস্থাগুলিকে তিন মাস সময় দিয়েছিল। যদি কেউ কেন্দ্রীয় সরকারের ২৫ মে-এর নতুন নির্দেশিকা কার্যকর না করে এমন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে ভারতে নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলেও জানা গিয়েছিল।

বুধবার থেকে দেশে জারি হয়েছে কেন্দ্রের ডিজিটাল নীতিবিধি। গোপনীয়তা বজায় রাখতে এই নতুন নিয়ম নির্দেশিকার বিরোধিতা করে হাইকোর্টে যায় হোয়াটসঅ্যাপ। দিল্লি হাইকোর্টে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, কেন্দ্রের এই নতুন নির্দেশিকা ভারতীয় সংবিধানেরই বিরুদ্ধে, কারণ এই নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে কেন্দ্র চাইলেই কোনও তথ্যের উৎস বা প্রথম প্রেরককে খুঁজে বের করতে হবে। যা হোয়াটসঅ্যাপের ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন নীতি’-র সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের গোপনীয়তার অধিকার এতে খর্ব হবে বলে মনে করছে হোয়াটসঅ্যাপ।

কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী রবীশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, যেমন দেশের সকল নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব ভারত সরকারের, ঠিক তেমনই দেশের আইনশৃঙ্খলা ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব। প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারকে বার্তা পাঠানোর উৎস জানাতে বাধ্য হোয়াটসঅ্যাপ।

রবীশঙ্কর প্রসাদ আরও জানান, এই নীতির ফলে দেশের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার রক্ষা সংক্রান্ত গুরুতর অপরাধ,প্রতিরোধ, তদন্ত ও শাস্তিও দেওয়া যাবে। একইসঙ্গে অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, আইনশৃঙ্খলা, অপরাধে উস্কানি, ধর্ষণ ও শিশুদের যৌন উৎপীড়ক জিনিসপত্রের প্রেরণ সংক্রান্ত অপরাধেও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। বার্তা প্রেরকের যে তথ্য চাওয়া হবে, তা শুধুমাত্র যুক্তিসঙ্গত বিশেষ ক্ষেত্রে। কোনও মানবাধিকার এখানে বিঘ্নিত হচ্ছে না।

শুধুমাত্র তদন্তের স্বার্থেই হোয়াটসঅ্যাপের কাছ থেকে প্রেরকের তথ্য জানতে চাইবে কেন্দ্র। ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, জনস্বাস্থ্যের মতো বিশেষ ক্ষেত্রগুলিতেই কেন্দ্র ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ ভাঙবে। উল্লেখ্য, কেন্দ্র সরকারের এই নতুন নীতিকে সম্মান জানিয়ে, মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার ভারত সরকারের কাছ থেকে নতুন নির্দেশিকাটি বাস্তবায়নের জন্য ছয় মাস সময় চেয়েছে। অন্যদিকে, নতুন সোশ্যাল মিডিয়া গাইডলাইন কার্যকর করার আগে ফেসবুক একটি বিবৃতি জারি করেছে যে এটি সরকারের নতুন নির্দেশিকাটিকে সম্মান করে এবং এটি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সরকারের নতুন সোশ্যাল মিডিয়া গাইডলাইনে স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে যে দেশের সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির ব্যবসায়ে ছাড় রয়েছে, তবে এই প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন সোশ্যাল মিডিয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, অভিযোগের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম থেকে আপত্তিজনক বিষয়বস্তু সরিয়ে ফেলতে হবে।

নতুন গাইডলাইনে কেন্দ্র সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে জানিয়েছে, দেশে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (নোডাল অফিসার, রেসিডান্ট গ্রিভান্স আধিকারিক) নিয়োগ করতে হবে। যে কোনও ক্ষেত্রে, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে ওটিটির বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে প্রতি মাসে তাদের প্রতিবেদনগুলি জারি করতে হয়। এগুলি ছাড়াও কোন পোস্ট কেন সরানো হয়েছে , সে সম্পর্কে তাদেরকে জানাতে হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মের বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপের হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জকে স্বাভাবিক ভাবে দেখছেন না দেশের বেশিরভাগ জনগণ, তাদের প্রশ্ন এবার কি বিদেশি কোম্পানি দেশের নীতি নির্ধারণ করবে? স্বাধীন রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকার নিজের যুক্তি রেখেছে আদালতে। দেশের বিচার বিভাগের ওপর নির্বাচিত সরকার ও জনগণের আস্থা আজও অবিচল। এখন শুধু অপেক্ষা বিচারের বাণীর।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন: ‘অবিলম্বে জবাব দিতে হবে’, ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপকে সাঁড়াশি চাপ কেন্দ্রের