নয়া দিল্লি: ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী দলগুলির জোট গড়ার কাজ চলছে পুরোদমে। ইতিমধ্য়েই বিহারের পটনায় নীতীশ কুমার এবং তেজস্বী যাদবের উদ্যোগে বিরোধীদের ১৫টি দলের মহাবৈঠক হয়ে গিয়েছে। সেই বৈঠকেও সব মসৃণ ছিল, এমনটা নয়। সভায় কংগ্রেসের সঙ্গে উত্তপ্ত মতবিনিময় হয় আম আদমি পার্টির। সেই বৈঠকের পরও, আপ-কংগ্রেস দ্বন্দ্ব থামছে না। রবিবার, রাহুল গান্ধীর ‘মহব্বত কি দুকান’ প্রচারকে তীব্র কটাক্ষ করে পদস্থ আপ নেতা তথা দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ প্রশ্ন তুলেছেন, বিরোধী দলগুলির জন্য কি রাহুলের মনে ভালবাসা নেই? তিনি জানান, রাহুল গান্ধী মাঝে মাঝেই বলছেন, ‘নফরত কে বাজার মে মহব্বত কি দুকান খুল কার বৈঠা হুঁ’, অর্থাৎ, ‘বিদ্বেষের বাজারে আমি ভালবাসার দোকান খুলেছি’। এই সংলাপ তাঁর খুব পছন্দের। সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, “স্যর, আমাদের মতেও ভারতে বিদ্বেষের বাজার চলছে। এই অবস্থায়, বিরোধী দলগুলি আপনার কাছে প্রেম চাইতে আসলে যদি আপনি যদি বলেন, আপনার কাছে তাদের জন্য ভালবাসা নেই, তাহলে আপনার মহব্বত কি দুকান নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।”
এর ফলে জনসাধারণের মনেও কংগ্রেস দল সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অহংকারী হওয়া ভাল। কিন্তু তারও একটা সীমা আছে। সেই সীমা অতিক্রম করলে মানুষ এবং অন্যান্য দলগুলি মনে করতে পারে, ক্ষমতার বদল হলে নতুন যে সরকার আসবে তারা বোধহয় অহংবোধে পূর্ণ।” এর পাশাপাশি বিরোধী দলগুলিকে একে অপরের বিরুদ্ধে তীক্ত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্যও আবেদন করেছেন আপ নেতা। তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্যে এই বিরোধী দলগুলি একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই অতীতে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছে। তবে এখন একত্রিত হওয়ার সময় এসেছে। সৌরভ বলেন, “উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী। পশ্চিমবঙ্গে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস এবং বামেরা। কেরলে বাম এবং কংগ্রেস পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। এই সমস্ত দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও, আমাদের এখন একত্রিত হতে হবে।”
পটনার বৈঠকে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, জোট সম্পর্কে খোলা মনে তাঁরা আলোচনা করতে চান। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, অতীত ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে তাঁরা প্রস্তুত। তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে নমনীয়তা দেখাতে হবে। এই লড়াইয়ে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।” তবে, আপের সঙ্গে কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব দ্রুত মিটবে বলে মনে হচ্ছে না। এদিন সৌরভ ভরদ্বাজ কংগ্রেসকে ‘মহব্বত কি দুকান’ নিয়ে খোঁচা দেওয়ার পরই, কংগ্রেসের দিল্লির নেতা অজয় মাকেন এক ভিডিয়ো প্রকাশ করে তলায় তলায় বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ তুলেছেন অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, “একদিকে, আপ কংগ্রেসের সমর্থন চাইছে, অন্যদিকে, তারা আমাদের দলের বিরুদ্ধে কথা বলছে। ওরা কী চায়? ওরা কি আমাদের সমর্থন চায়, নাকি আমাদের দল থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চায়? স্পষ্টতই জেলে যেতে চান না অরবিন্দ কেজরীবাল, তাই তিনি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। বিরোধীদের ঐক্য ভাঙাই আপের একমাত্র উদ্দেশ্য।”
এর আগে পটনার বৈঠকের ঠিক আগে, সেই বৈঠকে যোগ দেবে না বলে হুমকি দিয়েছিল আপ। তারা জানিয়েছিল, কংগ্রেস যদি কেন্দ্রের অধ্যাদেশ জারির বিরুদ্ধে তাদের লড়াইকে সমর্থন করে, তবেই তারা বৈঠকে যোগ দেবে। অন্যদিকে, কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়্গে জানিয়েছিলেন, বিরোধীদের বৈঠক এই বিষয়ে আলোচনার জায়গা নয়। সংসদ অধিবেশনের আগে এই বিষয়ে তাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে। শেষ পর্যন্ত বৈঠকে যোগ দেয় আপ। কিন্তু, আপ-কংগ্রেসের চাপা উত্তেজনার আঁচ যে কমেনি, তা এদিনের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণেই স্পষ্ট। এই জল এখন কতদূর গড়ায়, সেটাই দেখার।