পটনা: মানুষখেকোর ভয়ে কাঁপছে বিহারের পশ্চিম চম্পারণ জেলার বাল্মীকি টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট সংলগ্ন এলাকার মানুষ। শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ওই অঞ্চলে অষ্টম মানুষকে হত্যা করেছে বাঘটি, এমনটাই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। শুক্রবার, সঞ্জয় মাহাতো নামে এক ৩৫ বছরের যুবকের মৃত্যুর পর, চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন প্রভাত কুমার গুপ্ত ‘শুট অ্যাট সাইট’ অর্থাৎ বাঘটিকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তাকে জীবন্ত অবস্থায় পাকড়াও করাটা অসম্ভব বলে মনে করছে বন দফতর। আর তারপরই বন্দুক, মশাল হাতে নিয়ে বনের একাংশে অভিযান শুরু করেছে এলাকার পুরুষরা। তবে এখনও মানুষখেকোর সন্ধান মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত একমাসে অন্তত ৮জন মানুষকে হত্যা করেছে মানুষখেকো বাঘটি। তার সর্বশেষ শিকার রামনগর ব্লকের ডুমরি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় মাহাতো। জানা গিয়েছে, শুক্রবার জঙ্গল এলাকার কাছাকাছি একটি ঝোপে তিনি মলত্যাগ করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাকে আক্রমণ করেছিল বাঘটি। তার আগের দিন, বৃহস্পতিবার ভোরে সিংগাহি মুস্তলি গ্রামের এক বাড়ি থেকে ১২ বছরের একটি মেয়েকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল সে। বিছানায় মশারি টাঙিয়ে ঘুমোচ্ছিল মেয়েটি, মশারি ছিঁড়ে মেয়েটির ঘাড় কামড়ে ধরে তুলে নিয়ে গিয়েছিল বাঘটি। পরে কিশোরীর দেহ পাওয়া যায়।
বন দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাঘটিকে জীবিত অবস্থায় ধরার সমস্ত বিকল্প প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। বনকর্মীদের মতে বাঘটির বয়স চার বছরের কাছাকাছি। তারা জানিয়েছে, সম্ভবত, অন্য কোনও বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে সে জখম হয়েছে। আর তারপর থেকেই মানুষ শিকার করা শুরু করেছে। ফলে তাকে ‘মানব জীবনের জন্য বিপজ্জনক’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। জীবন্ত ধরার সমস্ত উপায় ফুরিয়ে যাওয়ায়, বাঘটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হায়দরাবাদের শার্পশুটার শাফাথ আলি খানকে ডেকে আনা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রায় ৪০০ বনকর্মীর এক বিশাল দল বাঘটির সন্ধান চালাচ্ছে।
এদিকে, পরপর মানুষের মৃত্যুর পরও এখনও পর্যন্ত বাঘটিকে ধরতে বা মারতে না পারায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ আশপাশের এলাকার মানুষ। শুক্রবারের ঘটনার পরই বিপুল সংখ্যক গ্রামবাসী স্থানীয় রেঞ্জ অফিসে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। তারা রাঘিয়ার ফরেস্ট রেঞ্জার সুজিত কুমার-সহ বনকর্মীদের মারধর করেছে এবং বন বিভাগের একটি গাড়ির ক্ষতি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সুজিত কুমার বলেছেন, “আমরা কোনওরকমে পালাতে পেরেছি।” বনকর্মীরা জানিয়েছেন বেশ কয়েকবার বাঘটি তাদের ফাঁদে ধরা দিতে দিতে দেয়নি। কখনও বন দফতরের হাতি চঞ্চল হয়ে উঠেছে, কখনও গ্রামবাসীদের শব্দে বাঘটি পালিয়ে গিয়েছে।