বেঙ্গালুরু : সম্প্রতি গুজরাতের স্কুলগুলিতে পাঠ্যক্রমে ভগবত গীতার অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই নিয়ম কার্যকর করার কথা গুজরাত বিধানসভায় ঘোষণা করা হয়েছে। গুজরাতের এই সিদ্ধান্তকে বাহবা জানিয়েছিল কর্নাটক সরকার। তারপরেই কর্নাটকের পাঠ্যক্রমেও ভগবত গীতার অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছিল। কিন্তু কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন, যে পাঠ্যক্রমে গীতার অন্তর্ভুক্তি আলোচনার পরই করা হবে। তবে কর্নাটক কংগ্রেস গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাঁরা অভিযোগ করেছে যে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার গৈরিকিকরণ করা হচ্ছে। এই শিক্ষানীতিকে অস্ত্র করে পাঠ্যক্রমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দুত্ববাদী চিন্তাভাবনা ভরে দেওয়া হচ্ছে।
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই ভগবত গীতার পক্ষে সওয়াল করে প্রশ্ন তুলেছেন যে ভগবত গীতা যদি নৈতিক শিক্ষা দিতে না পারে তাহলে অন্য আর কি নৈতিকবোধ জাগাতে পারে? তিনি বলেছেন, “ভগবত গীতা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা শিশুদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার উন্নতি ঘটাবে। এখানে ভুল কীসের? আমাদের রাজ্যেও এটি চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা দফতর। আগে তাদের রিপোর্ট দিতে দিন। এরপর আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।” তবে কর্নাটকের কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন যে তাঁরা ভগবত গীতা বা অন্য কোনও ধর্মীয় গ্রন্থের মাধ্যমে শিশুদের নৈতিক শিক্ষার বিরোধিতা করেন না। কর্নাটক বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, “আমরা সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করি। তাঁদের (বিজেপি সরকার) ভগবত গীতা, কুরআন বা বাইবেল শেখানোর বিষয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই, যতক্ষণ তাঁরা শিক্ষার্থীদের একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করে যা আজকের মান পূরণ করে।”
কংগ্রেস নেতা উল্লেখ করেছেন যে, নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজনীয়। কিন্তু সংবিধানকে অমান্য করে কোনও কিছু করা উচিত নয়। সিদ্দারামাইয়ার আরও সংযোজন, “আমরা একটি বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ এবং একটি বৈচিত্র্যময় দেশ। এবং আমাদের সকলের সহনশীলতার সঙ্গে একসাথে বসবাস করা উচিত।” তবে অন্য আরেকজন কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কে রহমান খান পাঠ্যক্রমে গীতার অন্তর্ভুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “সকল ধর্মীয় বই ছাত্রদের পড়াতে হবে। বিজেপির একটা স্বার্থ আছে বলে মনে হচ্ছে। প্রতিটি ধর্মীয় গ্রন্থে ‘ধর্ম’ শেখানো হয়। বিজেপি দাবি করতে পারে না যে শুধুমাত্র গীতাই ‘ধর্ম’ এবং ভারতীয় সংস্কৃতি শেখায়। নতুন শিক্ষানীতি পাঠ্যসূচিতে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ অন্তর্ভুক্ত করার একটি চালাকি ছাড়া আর কিছুই নয়।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিজেপি শাসিত গুজরাত রাজ্যের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শুরু হওয়া ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির স্কুল পাঠ্যক্রমে ভগবত গীতা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গুজরাতের সিদ্ধান্তের পরে কর্নাটকের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ শুক্রবার বলেছেন যে রাজ্য সরকার নৈতিক বিজ্ঞান শিক্ষার অংশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করবে। মন্ত্রী দাবি করেছেন যে শিশুদের মধ্যে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবনতি ঘটছে এবং অনেকে নৈতিক বিজ্ঞান প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। নাগেশের মতে, প্রতি সপ্তাহে একটি নৈতিক বিজ্ঞানের ক্লাস হত যেখানে ছাত্রদের রামায়ণ এবং মহাভারতের বিষয়বস্তু শেখানো হত। উল্লেখ্য়, বিজেপি দিল্লির মসনদে বসার পর থেকেই শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে। কখনও ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে ভারতের ইতিহাসের একটি গোটা অধ্যায়। আবার কখনও কোনও সংযুক্তিকরণ হয়েছে। এই নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে শিক্ষাব্যবস্থায় গৈরিকিকরণ করা হচ্ছে বিজেপির জমানায়।
আরও পড়ুন : Bihar Prisoner Death: মৌমাছির কামড়ে মৃত্যু বন্দির! ধুন্ধুমার থানার বাইরে, চলল গুলিও, মৃত ১ পুলিশকর্মী