নয়া দিল্লি: পাখির চোখ লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election 2024)। বিজেপির নেতৃত্বে থাকা এনডিএ (NDA) জোটের জয়ের রথ রুখতে মরিয়া বিরোধীরা। আর সেই লক্ষ্যেই ২৬টি দল একসঙ্গে হাত মিলিয়ে ইন্ডিয়া জোট গঠন করেছে। ইতিমধ্যেই দুই দফায় বৈঠক সেরেছে ইন্ডিয়া (INDIA) জোট। আগামী ৩১ অগস্ট ইন্ডিয়া জোটের তৃতীয় বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই জোটের ঐক্যে কাঁটা রাজ্যভিত্তিক কোন্দল। দিল্লি (Delhi) থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র (Maharashtra), পশ্চিমবঙ্গ(West Bengal), বিভিন্ন রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধী দলগুলির অন্তর্দ্বন্দ্ব।
প্রথমেই নজর রাখা যাক রাজধানীর দিকে। ইন্ডিয়া জোট তৈরি হওয়ার আগেই তা প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছিল কংগ্রেস-আম আদমি পার্টির কোন্দলের জেরে। বিহারের পটনায় বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠকের পরই আম আদমি পার্টির তরফে সাফ জানানো হয়েছিল যে দিল্লি অধ্য়াদেশ বিল নিয়ে কংগ্রেস যদি সমর্থন না জানায়, তবে তারা জোটে সামিল হবে না। সেই সময় কিছুদিন দোনামনার পর কংগ্রেস জানায় ঠিকই কিন্ত বুধবার থেকে ফের বিরোধ শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের দলীয় বৈঠকে দিল্লির সাতটি আসনেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে বলার পরই ইন্ডিয়া জোট ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আম আদমি পার্টি।
গতকালের বৈঠকের নেতৃত্বে ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। ওই বৈঠকের পরই বিতর্ক উসকে কংগ্রেস নেতা অলকা লাম্বা বলেন, “দিল্লির সাতটি আসনেই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে“। সঙ্গে সঙ্গে আপের তরফে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়ে জানানো হয়, যদি কংগ্রেস দিল্লিতে আসন সমঝোতায় না যায় তবে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
দিল্লির মতো হাল মহারাষ্ট্রেও। সেখানে কাকা-ভাইপোর সম্পর্কের সমীকরণের উপরে জোটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সম্প্রতিই ভাইপো অজিত পওয়ারের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। তাদের এই সাক্ষাৎ ঘিরে উত্তাল মহারাষ্ট্রের বিরোধী রাজ্য-রাজনীতি। রাজনৈতিক মহলে চর্চা, শরদ পাওয়ারকে কেন্দ্রীয় সরকারে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর বদলে। যদিও বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে এই জল্পনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন শরদ পওয়ার। এমনকী, অজিতের সঙ্গে বৈঠককেও পারিবারিক আলোচনা বলে লঘু করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু এই বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এনসিপির জোটসঙ্গী উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং কংগ্রেসও।
এদিকে, বাংলাতেও ইন্ডিয়া জোট নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তি রয়েছে। আপাতভাবে প্রধানমন্ত্রী মুখ কেউ নয়, এই শর্তেই গঠিত হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। কিন্তু কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’ বলে একতরফা প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের আইটি সেলের কনক্লেভে এই জল্পনা উস্কে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূলের এই কৌশলী প্রচার ঘিরে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে আপত্তি তুলতে পারে সিপিএম। বিরোধিতার সুর চড়াবেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীও।
শুধু প্রধানমন্ত্রী মুখ নিয়েই বিতর্ক নয়, সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই তৃণমূলকে পঞ্চায়েত বোর্ড ও সমিতি গঠন থেকে আটকাতে জোট বাঁধছে রাম-বাম ও কংগ্রেস। তৃণমূলের পাশে নেই, এই বার্তা দিতে বিজেপির সঙ্গেও হাত মেলাতে পিছপা হচ্ছেন না নীচু স্তরের বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা। এই আঁতাতকে কটাক্ষ করে আবার মুখ্য়মন্ত্রী মমতী বন্দ্যোপাধ্যায়ও গত ৯ অগস্ট বলেছেন, “এখন রাম-বাম, জগাই-মাধাই-গদাই মানে সিপিএম- কংগ্রেস সব এক হয়ে গিয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় ওখানে ন্যাশনাল পার্টিতে ইন্ডিয়া আর এখানে বিজেন্ডিয়া।”
জোট ঘোষণার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুব একটা বামে বা কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে দেখা না গেলেও, সম্প্রতি এই আক্রমণ সেই হিসাব গুলিয়ে দিয়েছে। তাই ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ আদৌ রয়েছে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।