নয়া দিল্লি: বিশ্বের বাকি দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ভারতেও দ্রুত হারে বাড়ছে ওমিক্রন (Omicron) আক্রান্তের সংখ্যা। প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ পার করেছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের (AIIMS) ডিরেক্টর ডঃ রণদীপ গুলেরিয়া(Randeep Guleria)-ও। রবিবার তিনি বলেন, “যে হারে ব্রিটেনে সংক্রমণ বাড়ছে, তা মাথায় রেখে ভারতকে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।”
গত ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা(South Africa)-এ প্রথম খোঁজ মেলে বি১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(World Health Organization)-র তরফে এটির নাম দেওয়া হয় ওমিক্রন (Omicron)। একইসঙ্গে জানানো হয়, করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটি কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ বার অভিযোজিত (Mutation) হয়েছে। সেই কারণে এর সংক্রামক ক্ষমতা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের (Delta Variant) তুলনায় বেশি হতে পারে।
“উদ্বেগের কারণ” (Variant of Concern) হিসাবে চিহ্নিত এই ভ্যারিয়েন্ট গত ৪ ডিসেম্বর ভারতে প্রবেশ করে। কর্নাটকে বিদেশ ফেরত এক যাত্রীর শরীরে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই সংক্রমণ বেড়ে ১৫৩-এ দা়ঁডিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই বিদেশ ফেরত যাত্রী। এই পরিস্থিতিতে দেশবাসী করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট থেকে কতটা সুরক্ষিত, সে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে এইমস প্রধান বলেন, “আমাদের সবরকমের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত এবং আশা করা উচিত যে ব্রিটেনের মতো পরিস্থিতি যেন খারাপ না হয়। ওমিক্রন নিয়ে আমাদের আরও তথ্যের প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “যখনই বিশ্বের কোনও প্রান্তে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, আমাদের উচিত দেশের পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি রাখা এবং যে কোনও পরিস্থিতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখা। বিনা প্রস্তুতিতে বিপদের মুখে না পড়ে, তার তুলনায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই উচিত।”
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ পাওয়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যেই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেন ও ডেনমার্কে। ২৪ ঘণ্টাতেই প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি আক্রান্তের খোঁজ মেলায়, শুক্রবারই ব্রিটেনে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার ছুঁয়েছে।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের জরুরি বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতাদের তরফে জানানো হয়েছে, দৈনিক হাজার হাজার বা লক্ষাধিক মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন, এ কথা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু এখনও সরকার তা চিহ্নিত করতে পারছে না। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই হাসপাতালে দৈনিক ৩ হাজার মানুষ ভর্তি হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, ব্রিটেনের কঠিন পরিস্থিতি দেখে কেন্দ্রের তরফেও সমস্ত রাজ্যগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। দেশের ১৯ টি জেলায় করোনার সংক্রমণ লাগামছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওমিক্রনের হাত ধরেই দেশে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক মাস্কের ব্যবহার এবং শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা সহ অন্যান্য কোভিড আচরণবিধি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্র। সাধারণ নাগরিকদের বিনা প্রয়োজনে বাইরে বেরানো যতটা সম্ভব এড়ানো যায়, সেই পরামর্শও দিয়েছে কেন্দ্র। দূরে থাকতে বলা হয়েছে ভিড় এবং জমায়েত থেকে।