নয়া দিল্লি: অবশেষে দেশে ফিরছে আরও ৮৫ জন ভারতীয়। কাবুল থেকে ইতিমধ্যেই বায়ুসেনার সি-১৩০জে বিমান ভারতীয়দের নিয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা গাজিয়াবাদে বায়ুসেনার ঘাঁটিতে নামবে।
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিনই তালিবানরা কাবুল দখল নেয়। ১৫ অগস্টের রাতেই আফগানিস্তানে উড়ে যায় দুটি ভারতীয় বায়ুসেনার সি-১৭ বিমান। তাদের সঙ্গে যায় ইন্দো-টিবেটিয়ান বাহিনীর জওয়ানরাও। তবে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে ১৫ অগস্টের রাতে কোনও উদ্ধারকার্য শুরু করা যায়নি। ভারতীয় দূতাবাসের উপরও কড়া নজর রাখছিল তালিবানরা। পরের দিন রাতের মধ্যেই ফিরিয়ে আনা হয় ৪৫ জন ভারতীয়কে। পরে বায়ুসেনার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানে ফেরত আনা হয় ৯৯ জন জওয়ান ও ২১ জন ভারতীয়কে।
এরপরই গতকাল রাতেই জানা যায়, বায়ুসেনার সি-১৩০জে বিমান পাঠানো হয়েছে আটকে থাকা বাকি ভারতীয়দের উদ্ধারের জন্য। এ দিন ভোরে কাবুল বিমানবন্দর থেকে ৮৫ জন ভারতীয়দের নিয়ে তা ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। জানা গিয়েছে, জ্বালানি ভরার জন্য বিমানটি তাজিকিস্তানে অবতরণ করেছে। সেখান থেকেই গাজিয়াবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে বিমানটি।
দুই ধাপে দূতাবাসের সমস্ত কর্মী সহ শতাধিক ভারতীয়কে ফেরানো হলেও এখনও প্রায় এক হাজারের মতো ভারতীয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে আটকে রয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পারিপার্শিক পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে উদ্ধারকার্যে ক্রমাগত বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া অনেকে দূতাবাসে নিজেদের নাম নথিভুক্ত না করায় তাদের খুঁজে বের করতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
সূত্রের খবর, গতরাতেই বায়ুসেনার আরেকটি সি-১৭ বিমান কাবুলে পৌঁছেছে। সেই বিমানে কমপক্ষে ২৫০ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। ভারতীয়রা বিমানবন্দরে পৌঁছলেই এই বিমানও রওনা দেবে বলে জানানো হয়েছে। এখন মুখ্য চ্যালেঞ্জ হল তালিবানদের তৈরি চেকপোস্ট পার করে কীভাবে ভারতীয়রা বিমানবন্দরে পৌঁছবেন।
ভারত সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করছে নয়া দিল্লি। কাবুল বিমানবন্দর ও আশেপাশের এলাকার প্রতি মুহূর্তের আপডেট নেওয়া হচ্ছে। মার্কিন বাহিনীর সবুজ সঙ্কেত মিললেই বিমান ওঠানামা করবে।
আটকে থাকা প্রায় কয়েক হাজার ভারতীয়দের মধ্যে প্রায় ২০০ জন শিখ ও হিন্দুরা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। তারা কাবুলের গুরুদ্বারে আশ্রয় নিয়েছেন। বুধববার রাতে তালিবানের মুখপাত্র একটি ভিডিয়ো বার্তায় জানান, গুরুদ্বারে আশ্রয় নেওয়া ওই ভারতীয়দের সুরক্ষার দায়িত্ব নেবে তালিবান। এরপরই আরও আতঙ্ক ছড়ায়, কারণ বিগত কয়েক দিন ধরেই তালিবানের “মুখে এক, কাজে আরেক” নীতি গোটা বিশ্বের সামনে এসেছে।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, দূতাবাসের কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনা অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। মার্কিন স্টেট সেক্রেটারি অ্যান্টনি ব্লিনকিনের সঙ্গে কথা বলার পর দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় ১২০ জন ভারতীয়কে নিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছিল বিমানটি।
এ দিকে, গতকালই সূত্র মারফত খবর মিলেছে, কাতারে তালিবানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে আফগানিস্তান থেকে ভারতীয় কূটনীতিবিদ ও দূতাবাসের কর্মীদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে। ভারতীয়দের তারা আক্রমণ বা কোনও প্রকার ক্ষতি করবে না বলেই জানিয়েছে। যদিও সরকারের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, ভারতীয়দের উপর হামলার আশঙ্কা থাকায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আরও পড়ুন: গুলির শব্দেই ঘুম ভাঙল সপ্তাহ শেষে, পুলওয়ামাতেও শুরু গুলির লড়াই, নিকেশ ৩ জঙ্গি