জ্যোতির্ময় রায়: দেশে ক্রমবর্ধমান করোনা (COVID) সংক্রমণের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবার, নীতি আয়োগ দেশের প্রখ্যাত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি ভিডিয়ো কনফারেন্স করে। এই কনফারেন্সের আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা অতিমারি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে তাঁদের মতামত বিনিময় করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, “আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি সংক্রমণের সম্পূর্ণ শনাক্তকরণের জন্য সিটি স্ক্যান বা বুকের এক্স-রেও করা উচিত, যাতে সময় মতো সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। কিন্তু এমন রোগী যাঁদের লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় সংক্রমণ স্পষ্ট ধরা পড়ছে না, তাঁদের সিটি স্ক্যান বা বুকের এক্স-রে করা উচিত। কেবল এটিই নয়, করোনা রিপোর্ট প্রথমবার নেগেটিভ এলে দ্বিতীয়বার ফের পরীক্ষা করার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এইমসের পরিচালক ডঃ রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, “করোনা অতিমারির এক বছরের মধ্যে আমরা দেখেছি যে দু’টি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধ এবং তার সময়োপযোগী ব্যবহার। আপনি যদি তৎক্ষণাৎ পরীক্ষা করান এবং সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করেন, তাহলে ঝুঁকিটা অনেকটা কম হয়।” তিনি আরও জানান, একই দিনে ওষুধের ককটেল (আরও ওষুধ) রোগীর মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, “এটি বুঝতে হবে যে রেমেডিসভির কোনও ম্যাজিক পিল নয়, মৃত্যুহার কমাতে পারবে এমন কোনও ওষুধও নয়। আমরা এটির ব্যবহার করে থাকি কারণ আমাদের কাছে এই মুহূর্তে কোনও অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ নেই। হালকা উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের সময়ের পূর্বে রেমেডিসভির দেওয়া হলে যেমন কোনও লাভ হয় না, আবার এটি যদি খুব দেরিতে দেওয়া হয় তাহলেও কোনও লাভ হয় না।” ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়া এ-ও জানান, রেমেডেসিভির কেবলমাত্র সেই রোগীদের দেওয়া উচিত যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং তাঁদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম রয়েছে। স্টেরয়েডও যেন প্রথম দিন না দেওয়া হয়, সে বিষয়েও জানান গুলেরিয়া।
ডাঃ গুলেরিয়া বলেন,”পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে স্টেরয়েড তখনই উপকারে আসবে যখন এটি সঠিক সময়ে দেওয়া হয়। অক্সিজেনের স্তর পড়ার আগে যদি এটি দেওয়া হয় তবে এর ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা যায়। তিনি এ-ও জানান, যদি নমুনাটি সঠিকভাবে নেওয়া না হয় বা সংক্রমণ খুব বেশি না ছড়িয়ে পরার আগেই পরীক্ষা করা হয়, তাহলে অনেক সময় রিপোর্ট পজিটিভ আসে না। তাই করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি এক্স-রেও করানো উচিত। আর প্রথমবার করোনা শনাক্ত না হলে ২৪ ঘণ্টা পর ফের করোনা পরীক্ষা করানো উচিত।
আইসিএমআরের মহাপরিচালক ডঃ বলরাম ভার্গব বলেছিলেন যে করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অধিক সংখ্যক লোকেরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় অক্সিজেনের অভাব দেখা দিচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের ব্যবহার ৫৪.৫ শতাংশ দেখা যাচ্ছে, প্রথম ঢেউয়ে এটি ছিল ৪১.১ শতাংশ। একই সময়ে, যান্ত্রিক ভেন্টিলেটরের প্রয়োজনীয়তা ২৭ শতাংশ দেখা যাচ্ছে, যা আগে ছিল ৩৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কম এবং অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ডাঃ ভি কে পাল বলেছেন, “শারীরিক সংক্রমণের চেয়ে বায়ুবাহিত সংক্রমণ আরও বিপজ্জনক। রেমডেসিভিরের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল যা এখন বাড়ানো হয়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছিল, যা এবার ৩২ শতাংশ দেখা গিয়েছে। গত বছরের মতোই ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে ২১ শতাংশ রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। ইতিমধ্যে, করোনা সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার ১ মে থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রত্যেককে ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা করেছে। তবে ভ্যাকসিন নিলেও অতিমারি রুখতে করোনাবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে ও মাস্ক পরতে হবে।
আরও পড়ুন: করোনা কড়চা: উত্তর প্রদেশে আপাতত লকডাউন নয়, হাইকোর্টের নির্দেশে সুপ্রিম স্থগিতাদেশ