নয়া দিল্লি : ভারতে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হচ্ছে। ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। আর করোনার এই ঢেউয়ের একটি অনুঘটকের মতো কাজ করছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। যদিও সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে মোট করোনা সংক্রমণের দুই শতাংশেরও কম ওমিক্রনে আক্রান্ত। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এই পরিসংখ্যানে একেবারেই উদ্বেগহীনভাবে থাকা যায় না। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ সতর্ক করছেন, ওমিক্রনের কারণে দেশে শীঘ্রই একটি বড় স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে প্রকাশ করেছিল, ভারতে ডেল্টাকে সরিয়ে ডমিনেন্ট হয়ে উঠে আসতে শুরু করেছে ওমিক্রন।
ভারতে ওমিক্রনে আক্রান্তের সরকারি পরিসংখ্যান প্রায় দেড় হাজার। কিন্তু বাস্তবে তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি এক বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বাস্তবে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ গুণেরও বেশি হতে পারে – অর্থাৎ, প্রায় ১৮ হাজারের আশেপাশে। এই পরিসংখ্যান প্রতিদিন বেড়ে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
অন্যান্য একাধিক দেশে মোট করোনা সংক্রমণের ৯০ শতাংশের জন্য দায়ী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যান কিছুটা কম, কারণ এখানে খুব কম নমুনা পরীক্ষার ল্যাব রয়েছে যা জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষা করতে পারে। আর জিনোম সিকোয়েন্সিং ছাড়া ওমিক্রন সনাক্তকরণ সম্ভব নয়।
ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের দুটি ল্যাবরেটরির তথ্য নিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, দেশের বাস্তব চিত্রটা অনেকটাই আলাদা হতে পারে। দিল্লি এবং মুম্বইয়ে দুটি বড় জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ল্যাবরেটরি থেকে পাওয়া তথ্য পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সেখানে পরীক্ষা করানো সমস্ত কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে, ওমিক্রন এখন প্রায় ৬০ শতাংশের। মুম্বইয়ের আরও একটি ওমিক্রন পরীক্ষার ল্যাবরেটরিতে দেখা গিয়েছে, গত সপ্তাহে ওমিক্রন পজিটিভি হওয়ার হার ছিল ৩৭ শতাংশের বেশি, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬০ শতাংশেরও বেশি।
এটা ভারতের জন্য স্বস্তিরও আবার দুশ্চিন্তারও। ভাল খবর হল ওমিক্রন ডেল্টার তুলনায় কম তীব্র সংক্রমণ ঘটায়। ডেল্টায় হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর হারও ওমিক্রনের তুলনায় অনেকটা বেশি। কিন্তু ভারতের জন্য উদ্বেগজনক খবর হল ওমিক্রন অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক তথ্য থেকে অনুমান, এটি ডেল্টার চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি সংক্রামক।
যদি সারা বিশ্বের মতো ভারতেও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ঢেউ আছড়ে পড়ে, তাহলে দেশে প্রতিদিন ১৬ লাখ থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত সংক্রমণ দেখা যেতে পারে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ৪ লাখ পর্যন্ত সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল ডেল্টার সংক্রমণে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাপক চাপ তৈরি হতে পারে – হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ডাক্তার এবং ওষুধের প্রাপ্যতা – সব ক্ষেত্রে চাপ বাড়বে। কারণ, ওমিক্রনে মোট আক্রান্তের মাত্র কয়েক শতাংশই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, মোট সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বেশি।
ডেল্টায় আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে আনুমানিক ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে তার অর্ধেক হলে, ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। কিন্তু একটি বিশ্লেষণ করে দেখলে, চমকে দেওয়ার মতো পূর্বাভাস উঠে আসতে পারে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় চার লাখ ডেল্টা সংক্রমণ পৌঁছেছিল, যার ফলে প্রায় ২৪ হাজর জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে যদি ২০ লাখ ওমিক্রন সংক্রমণ হয় তৃতীয় ঢেউয়ে, তাহলে প্রতিদিন ৬০ হাজার ওমিক্রন আক্রান্তের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।