নয়া দিল্লি: দীর্ঘ সময় ধরে গৃহবন্দি থেকে শিশুদের উপর মানসিক প্রভাব পড়ছে। তাই দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কিছুটা কমতেই স্কুল খোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মানসিক বিকাশের বদলে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই শিশুদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলতে শুরু করেছে। পঞ্জাব, বিহার, মধ্য প্রদেশ, গুজরাট, ছত্তিসগঢ় ও উত্তরাখণ্ডে স্কুল খোলার পর থেকেই শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঝাড়খণ্ড ও চণ্ডীগঢ়ে আক্রান্তের হার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাকি রাজ্য়গুলিতে জুলাই-অগস্ট মাসে স্কুল খোলার পর থেকেই আক্রান্তের হার ৯.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিহার, মধ্য প্রদেশ, গুজরাট, ছত্তিসগঢ়েও আক্রান্তের হার ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ২৬ জুলাই থেকে গুজরাটের সমস্ত স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। মধ্যয় প্রদেশ, ছত্তিসগঢ়ে অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেই স্কুল খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। গত ১৬ অগস্ট থেকে বিহারেও স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। উত্তরাখণ্ডেও ২ অগস্ট থেকে স্কুল খুলে গিয়েছে। এদিকে, স্কুল খোলার পরই উত্তরাখণ্ডেও শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার ১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্কুল খোলার পর হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্যেই একমাত্র শিশুদের আক্রান্তের হার কম। যেমন ঝাড়খণ্ডে গত ৯ অগস্ট স্কুল খুলেছে। তবে শিশুদের আক্রান্তের হার ০.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে তেলঙ্গনা, দিল্লিতেও স্কুল খুলে দেওয়া হচ্ছে।
একদিকে, তেলঙ্গনায় যেমন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি স্কুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনই দিল্লিতেও ধাপে ধাপে বিভিন্ন ক্লাসে পঠনপাঠন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবথেকে দুর্বিষহ পরিস্থিতি হয়েছিল দিল্লিরই। দৈনিক ২৫ হাজার আক্রান্ত, শয্যা-অক্সিজেন সংকটের কথা মাথায় রেখেই ধাপে ধাপে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১ সেপ্টেম্বর থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হবে স্কুলগুলিতে। খুলছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারগুলিও। দ্বিতীয় দফায় আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারাও স্কুলে এসে পড়াশোনা করতে পারবে। পুজোর পর থেকে রাজ্যেও স্কুল খোলার পরিকল্পনা রয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। ইতিমধ্যেই তিনি স্কুলগুলির প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বলেছেন।
আগামী অক্টোবর থেকে জ়াইডাস ক্যাডিলার হাত ধরে ১২ উর্ধ্বদের টিকাকরণ শুরুর পরিকল্পনা করলেও শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অনেক অভিভাবকই। তার উপরে রয়েছে তৃতীয় ঢেউয়ের ভয়, যেখানে শিশুদেরই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি বলে জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতুতে স্কুল গেলে শিশুদের করোনা সংক্রমিত হওয়া নিয়ে চিন্তায় অভিভাবকরা।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিশুরা মূলত তাদের অভিভাবক বা সংস্পর্শে আসা কোনও প্রাপ্তবয়স্কের মাধ্যমেই সংক্রমিত হচ্ছে। সেই কারণে মা-বাবা ও স্কুলের শিক্ষাকর্মীদের টিকাকরণ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকেই তারা করোনা সংক্রমণ আটকাতে পারবে। আরও পড়ুন: অজানা জ্বর কি আসলে ডেঙ্গুই? ১০ দিনে ৪৫ শিশুর মৃত্যুতে উদ্বেগে রাজ্য, তদন্তের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর