নয়া দিল্লি: ডিজিটাল তথ্যের অপব্যবহার করলে বা এই তথ্য গোপন রাখতে না পারলে, ডেটা পরিচালনা এবং প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। বৃহস্পতিবার (৩ অগস্ট), সংসদে পেশ করা হল ডিজিটাল ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল, ২০২৩। তথ্য সুরক্ষার বিধি লঙ্ঘন করলে সংস্থাগুলির জন্য এই কঠোর শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে এই বিলে। তবে, ২০২২ সালের নভেম্বরে এই বিলের যে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছিল, তার তুলনায় শাস্তির বিধানগুলি অনেকটই শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া এই বিলে একটি তথ্য সুরক্ষা বোর্ড গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, এই বোর্ড যদি তদন্তের পর জানায়, কোন ব্যক্তি বা সংস্থা এই ডিজিটাল তথ্য সুরক্ষা আইনের বিধানগুলি লঙ্ঘন করেছে, তাহলে ওই ব্যক্তি বা সংস্থাকে প্রথমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। তারপর, মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা আরোপ করা হবে।
এদিন, বিরোধী সাংসদদের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে লোকসভায় এই বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। বিরোধীরা দাবি করেন, এই বিল নাগরিকদের গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনকারী। বিরোধীরা বিলটি বিবেচনার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি করে। তারা জানায়, গত বছর তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত একটি বিল এনেছিল সরকার। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তাই নতুন বিলটির আরও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। এদিন সকালেই বিলটিকে অর্থ বিল হিসাবে পেশ করার বিষয়ে তাঁর অসম্মতি প্রকাশ করেছিলেন কংগ্রেস নেতা মনীশ তিওয়ারি। বিলটি পেশ করার সময় অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, এই বিলটি কোনও অর্থ বিল নয়। তাই এর উপর ব্যাপক আলোচনা করা যাবে।
এই বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে কোনও পদক্ষেপ করা হলে, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, তথ্য সুরক্ষা বোর্ড, বোর্ডের চেয়ারপার্সন এবং বোর্ডের কোনও সদস্য, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা, বা অন্য কোনও আইনি প্রক্রিয়া করা যাবে না। তথ্য সুরক্ষা বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী, জনসাধারণের স্বার্থে কোনও বিষয়বস্তু ব্লক করতে পারবে কেন্দ্র। ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, এই আইন দেশের সমস্ত নাগরিকের অধিকার রক্ষা করবে। পাশাপাশি এই আইনের ফলে প্রসার ঘটবে উদ্ভাবনী অর্থনীতির। এছাড়া, জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো জরুরী পরিস্থিতিতে সরকার আইনিভাবে এই সকল ডিজিটাল তথ্য ব্যবহার করতে পরবে কেন্দ্র। বিলে এই বিষয়ে কেন্দ্রকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বিলটি নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি মূলত তিনটি জায়গায়। প্রথমত, বিলটি এর আগে সংসদীয় বোর্ড পর্যালোচনা করে খারিজ কর দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, এটি গোপনীয়তার অধিকারের বিরোধী বলে দাবি করছে তারা। তৃতীয়ত, এই বিল সরকারকে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। শেষ পর্যন্ত এই বিলটি আইনে পরিণত হয় কিনা, এখন সেটাই দেখার।