গুয়াহাটি : গত সপ্তাহ থেকে লাগাতার বৃষ্টির ফলে বিপর্যস্ত অসম ও উত্তর-পূর্বের কিছু অংশের জনজীবন। বন্যার কবলে অসমের প্রায় ২৭ টি জেলা। সেখানকার প্রায় ৬ লক্ষ বাসিন্দাদের ঘরছাড়া হতে হয়েছে। বন্যার কবলে পড়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল মৃতের সংখ্য়া বেড়ে হয়েছে ৯। দারাং জেলায় বন্যার জলের স্রোতে তলিয়ে গিয়েছেন এক ব্যক্তি। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীসহ আটকে পড়েছে দুটি দূরপাল্লার ট্রেন। অতিবৃ্ষ্টির কারণে পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় নেমেছে ধস। এর ফলে একাধিক জায়গায় রাস্তা, ব্রিজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় স্কুলবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বন্যায় সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাগাঁও। সেখানেই ২.৮৮ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে।
৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ বন্যার কবলে
অসমের প্রায় ২৭ টি জেলায় ৬ লক্ষ লোক বন্যার কবলে পড়েছে। অসমের রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (ASDMA) জানিয়েছে, ব্রিজ, রাস্তাঘাট, স্কুলবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিমা হাসাওতে পরপর ছোটোখাটো ধসের খবর আসতেই থাকছে। সেই কারণে ডিমা হাসাওয়ের সঙ্গে রেলপথে ও সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বারাক উপত্যকার সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই বারাক উপত্য়কায় রয়েছে তিনটি জেলা। হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ ও চাচার। অসমের মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, খুব তাড়াতাড়ি এই অবস্থা থেকে বের করে আনা হবে। দক্ষিণ অসমের সঙ্গেও পুনরায় যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে।
৫০ হাজার বন্যা দুর্গতের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয়
রাজ্য় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় ৫০ হাজার জন মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি শিশু রয়েছে। ত্রাণ শিবিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন গর্ভবতী। আপাতত জাতীয় সড়ক ও অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গাগুলিতে অবস্থিত স্কুলগুলিতেই ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বারাক উপত্যকায় খাদ্য সংকট!
ধস নামার ফলে বারাক উপত্যকার সঙ্গে সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এদিকে বারাক উপত্যকায় রয়েছে অসমের তিনটি জেলা। হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ ও চাচার। যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে আগামিদিনে সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার একটা আশঙ্কা দেখা গিয়েছে। ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া জানিয়েছিল, এই তিন জেলার বাসিন্দাদের জন্য আপাতত আগামী ১৫ দিনের খাদ্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে সংযোগ না স্থাপন করা হলে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। গুয়াহাটিতে এফসিআই এর একটি আঞ্চলিক অফিসের তরফে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য়, খাদ্যশস্য সমেত গাড়ি অসমের চাচার জেলার সালচাপড়া রেল হেডে যাওয়ার পথে আটকে পড়েছে। হাফলং ও অন্যান্য এলাকায় বড় ধস নামার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বারাক উপত্যকায় খাবার পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, অসমের গোটা পরিস্থিতির দিকেই সরকার নজর রেখেছে। ভিডিয়ো কনফারেন্সে তিনি গতকাল মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কোনরাড সাংমার সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা গিয়েছে, হিমন্ত বিশ্বশর্মা মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন যাতে, মেঘালয়ের মধ্যে দিয়ে সড়ক পথে বারাক উপত্যকার বন্যা দুর্গত এই তিন জেলায় ত্রাণ পৌঁছোনোর ব্যবস্থা করা হয়। এই বিষয়ে কোনরাড সাংমা তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন বলেই জানা গিয়েছে।
নির্দিষ্ট দামে শিলচর-গুয়াহাটি বিমান চালাবে সরকার
বন্যায় বাতিল হয়েছে একাধিক ট্রেন। এই পরিস্থিতিতেই আটকে পড়েছেন একাধিক যাত্রী। এদিকে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই শিলচর-গুয়াহাটি বিমানে যাত্রার ভাড়া বেড়ে গিয়েছে। প্রতিটি সিটের জন্য দিতে হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি। অসমে আটকে পড়া যাত্রীদের বাড়ি ফেরার একমাত্র উপায় ছিল বিমান পরিষেবা। কিন্তু তার আকাশ ছোঁয়া দামে সেই আশার আলোও নিভতে বসেছিল। এরপরই অসমের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার শিলচর ও অসমের মধ্যে একটি বিশেষ বিমান পরিষেবা শুরু করার কথা ভেবেছে। স্থানীয় বিমান পরিষেবা সংস্থা ফ্লাইবিগ এয়ারলাইনের সঙ্গে চুক্তি করে প্রতিটি সিটের জন্য টিকিটের দাম ৩ হাজার টাকা করে মাথা পিছু নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
কেন্দ্রের তরফে সাহায্য
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, কেন্দ্রের তরফে বন্যা কবলিত অসমে ১ কোটি টাকা ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অসমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নেন। এবং নিশ্চিত করেছিলেন রাজ্যকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সবরকম সাহায্য় করবে কেন্দ্রীয় সরকার।