নয়া দিল্লি: উনিশের পর চোখ ছিল একুশে। কারণ একটাই, বাংলা। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election) নিয়ে আগ্রহ যত না বেশি, তার চেয়েও অনেক বেশি আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। শুক্রবার দুপুর ১২ টা বাজার আগেই অপেক্ষার প্রথম দফার অবসান ঘটায় নির্বাচন কমিশন। সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয় বিকেল সাড়ে ৪ টেয়। সেখানেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন ঘোষণা হতে পারে, তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল জল্পনা। সব জল্পনায় ইতি টেনে বিকেলেই সাংবাদিক বৈঠকে বসেন সুনীল আরোরা। জানান, ৮ দফায় হবে বিধানসভা ভোট। প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শুরু হবে ২৭ মার্চ। পাঁচটি রাজ্যেরই ফলাফল ২ মে ঘোষণা হবে।
পুদুচেরিতে ৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণ। একই দিনে ভোটগ্রহণ তামিলনাড়ুতেও। সবকটি আসনের ফলাফল ঘোষণা ২ মে।
কেরলে এক দফায় অনুষ্ঠিত হবে বিধানসভা নির্বাচন। ৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণ।
প্রথম দফার ভোট ২৭ মার্চ (৩০ আসনে)। ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোট।
দ্বিতীয় দফার ভোট ১ এপ্রিল (৩০ আসনে)। পশ্চিম মেদিনীপুর (২), পূর্ব মেদিনীপুর (২), দক্ষিণ ২৪ পরগণা (১)।
তৃতীয় দফা ৬ এপ্রিল (৩১ আসন)। হাওড়া ভাগ ১, হুগলী ভাগ ১, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভাগ ২।
চতুর্থ দফা ৪৪ আসন ১০ এপ্রিল। হাওড়া ভাগ ২, হুগলি ভাগ ২, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভাগ ৩, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার।
পঞ্চম দফা ১৭ এপ্রিল ৪৫ আসন। উত্তর ২৪ পরগনা ভাগ ১, নদীয়া ভাগ ১, পূর্ব বর্ধমান ভাগ ১, দার্জিলিং, কালিম্পঙ, জলপাইগুড়ি।
ষষ্ঠ দফা ২২ এপ্রিল ৪৩ আসন। উত্তর ২৪ পরগনা ভাগ ১, নদীয়া ভাগ ২, পূর্ব বর্ধমান ভাগ ২, উত্তর দিনাজপুর।
সপ্তম দফা ২৬ এপ্রিল ৩৬ আসন। মালদা ভাগ ১, মুর্শিদাবাদ ভাগ ১, পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণ কলকাতা, দক্ষিণ দিনাজপুর।
অষ্টম দফা ২৯শে এপ্রিল ৩৫টি আসন। মালদা ভাগ ২, মুর্শিদাবাদ ভাগ ২, বীরভূম, উত্তর কলকাতা।
বাংলায় প্রথমবার ৮ দফা বিধানসভা নির্বাচন। প্রথম দফার ভোট ২৭ মার্চ (৩০ আসনে), দ্বিতীয় দফা ১ এপ্রিল (৩০ আসনে), তৃতীয় দফার ভোট ৬ এপ্রিল (৩১ আসনে), চতুর্থ দফার ভোট ১০ এপ্রিল (৪৪ আসনে), পঞ্চম দফার ভোট ১৭ এপ্রিল (৪৫ আসনে), ষষ্ঠ দফার ভোট ২২ এপ্রিল (৪৩ আসনে), সপ্তম দফা ২৬ এপ্রিল (৩৬ আসনে), অষ্টম দফা ২৯ এপ্রিল (৩৫ আসনে)। মোট ২৯৪ টি আসনে ভোটগ্রহণ। ফল ঘোষণা ২ মে।
অসমে তিন দফায় ভোট গ্রহণ। পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলাফল ঘোষণা হবে ২ মে, জানালেন মুখ্য কমিশনার। ২৭ মার্চ, ১ এপ্রিল, ৬ এপ্রিল ভোট গ্রহণ অসমে।
স্পর্শকাতর বুথে ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা। করোনার কথা মাথায় রেখে ১ ঘণ্টা বাড়ছে ভোট গ্রহণের সময়সীমা। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে প্রচারে যেতে পারবেন সর্বাধিক ৫ জন। সকল পোলিং অফিসারদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে।
নির্বাচনের বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ হচ্ছেন অজয় নায়েক। বিবেক দুবে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক হচ্ছেন। তিনি ২০১৯ সালেও রাজ্যের পর্যবেক্ষক থাকছেন। সঙ্গে রয়েছেন মৃণাল কান্তি দাশ। তিনি উনিশের ভোটে ত্রিপুরার পর্যবেক্ষক ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আয়-ব্যায়ের পর্যবেক্ষক বি মুরলী কুমার। সব রাজ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আধাসেনা। পশ্চিমবঙ্গে ৩১ শতাংশ ভোটকেন্দ্র বৃদ্ধি। অনলাইনেই জমা দেওয়া যাবে মনোনয়ন পত্র। জামানতও অনলাইনেই।
সব ভোট কেন্দ্রই এ বার গ্রাউন্ড ফ্লোরে। ১ লক্ষ ১ হাজার ৯১৬ বুথ। একটি বুথে সর্বোচ্চ ভোটদাতার সংখ্যা ১০০০। ভোটারদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা হবে। ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মীদের শরীরের দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। যত সংখ্যক ভোট কর্মী তত সংখ্যকই নিরাপত্তারক্ষী। করোনা আবহে বিহার বিধানসভা ও রাজ্যসভার ১৪ আসনে নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছে নির্বাচন কমিশন। বয়স্ক নাগরিকদের জন্য পোস্টাল ব্যালট, প্রয়োজনে বাড়ি গিয়ে ভোট সংগ্রহ করে আনা হবে।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভোটের নির্ঘণ্ট এ দিন ঘোষণা হচ্ছে তা হল অসম, কেরল, পুদুচেরি ও তামিলনাড়ু। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার মেয়াদ আগামী ৩০ মে শেষ হচ্ছে। অসমে ৩১ মে এবং তামিলনাড়ুতে ২৪ মে বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ কেরলে ১ জুন এবং পুডুচেরিতে ৮ জুন শেষ হচ্ছে।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার আগে করোনাকালের বিহারের মতো বড় রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পরিচালনার জন্য প্রথম সারির যোদ্ধাদের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানালেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা। পাশাপাশি যারা এই সংক্রমণের ঝুঁকি মাথায় নিয়েও ভোটের কাজ করেছেন সেসব ভোটকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।