ডাঃ শশাঙ্ক জোশী: ইতিমধ্যে ১৫ দিন আগেই করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে ভারতে। মহারাষ্ট্রে ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি দেখে আমাদের মনে হচ্ছে জানুয়ারি মাসের ১৫ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে দেশে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণ দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। কয়েকদিন মধ্য যদি নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষে পৌঁছয় তবে অবাক হওয়ার মত কিছু থাকবে না। শুধুমাত্র ভারতে নয়, সারা বিশ্ব থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে করোনার নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর কোনও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারবে না, কারণ ওমিক্রনে আক্রান্তের সংক্রমণের পরিমাণ খুবই সামান্য। হাসপাতালের ৮০ শতাংশ বেডই এখনও খালি। অক্সিজেন পরিষেবা যুক্ত বেডে রোগীর সংখ্যাও খুবই কম এবং এই মূহূর্তে ভেন্টিলেটরের কোনও অস্তিত্ব নেই। আমারা আশা করছি ঠিক যেভাবে দ্রুত গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে একই রকমভাবে সংক্রমণের হার কমবে এবং খুব তাড়াতাড়িই হয়তো প্যানডেমিক থেকে এনডেমিকের সূচনা হবে।
অনেক গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, ওমিক্রন করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলির তুলনায় বেশি সংক্রমক হলেও এর মারণ ক্ষমতা ও অসুস্থ করার প্রবণতা খুবই কম। খুব সহজেই ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে চিকিৎসা করানো সম্ভব। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারও করোনা রোগীর চিকিৎসা নিয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। তৃতীয় ঢেউ কতটা মারাত্মক সেটা নির্ভর করেছে অক্সিজেনের চাহিদা, হাসপাতালে বেড ও ভেন্টিলেটরের চাহিদার ওপর। দীর্ঘদিন ধরে যদি এই গুলোর কোনও চাহিদা না থাকে তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও দরকার নেই। কারণ অকারণে অতিরিক্ত উদ্বেগ বা ভয় অন্য সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
করোনা পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক নয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ কমানো প্রয়োজন
যেসব রোগীর কোনও উপসর্গ নেই তাদের করোনা পরীক্ষা না করালেও চলবে। আমরা লক্ষ্য করেছি যে উপসর্গবিহীন করোনা রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণের মাত্রা খুবই কম। অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার কারণে টিস্যুতেও ভাইরাসের প্রভাব খুবই কম। এই সমস্ত ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষা করা খুব বেশি কাজে লাগবে না। হাসপাতালে আমারা বেশ কিছু রোগী দেখছি যাদের সংক্রমণ মোটেই তীব্র নয়।
করোনা ভাইরাসের সঙ্গে বেঁচে থাকা আমাদের শিখতে হবে। মনে রাখতে হবে ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট আসতেই থাকবে। যখন কোনও শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসও চরিত্র বদল করে। তাই তৃতীয় ঢেউয়ের পর আমরা চতুর্থ ও পঞ্চম ঢেউও দেখতে পারি। যদি আক্রান্তে সংখ্যা বাড়তে থাকে তবে বলাই যায় আগামী দিনেও সংক্রমণ বাড়বে, তাই বারবার করোনা পরীক্ষা করার কোনও অর্থ নেই। এখনও যদি কোনও রোগীর উপসর্গ তীব্র হয়, তবে অবশ্যই তাঁকে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। এর পাশাপাশি যেসব রোগীর কোমর্বিডিটি রয়েছে অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের উপসর্গ হওয়া মাত্রই করোনা পরীক্ষা করানো প্রয়োজন কারণ, তাদের দেহে ভাইরাসের প্রভাব গুরুতর হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতার অঙ্গ হিসেবে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রসঙ্গত আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, দুবছর আগে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যে অবস্থা ছিল, সেই তুলনায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এখন অনেক বেশি উন্নত। এখন আমাদের করোনার সব ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। সকলকে মনে রাখতে হবে সংক্রমণের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে কোভিড বিধি মেনে চলা প্রয়োজন। এই মূহূর্তে সংক্রমণ প্রতিরোধে স্কুল কলেজ বন্ধ রাখাও দরকার।
লেখক কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য