মুম্বই: নিজের দলের সাংসদের সিনেমাই মুক্তি পেতে দিচ্ছে না বিজেপি? কঙ্গনা রানাউতের ‘এমার্জেন্সি’ সিনেমার মুক্তি নিয়ে এবার বম্বে হাইকোর্টে এই প্রশ্নই তুলে দিলেন সহ-প্রযোজক। সিনেমার মুক্তি আটকানোর এই ট্রেন্ড বন্ধ হওয়া উচিত, এ কথা বলেই বম্বে হাইকোর্টের তরফে এ দিন সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনকে সিনেমার মুক্তির তারিখ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বলল।
সেন্সরের খাঁড়া ঝুলছে অভিনেত্রী তথা বিজেপি সাংসদ কঙ্গনা রানাউতের সিনেমা ‘এমার্জেন্সি’র উপরে। কঙ্গনা রানাউত, অনুপম খের ও শ্রেয়স তালপাড়ে অভিনীত এই সিনেমা ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণার উপরে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তির আগেই শিখ সম্প্রদায়ের তরফে অভিযোগ করা হয় যে এই সিনেমায় শিখ সম্প্রদায়কে নীচু করে দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রেও জানা গিয়েছে, স্পর্শকাতর বিষয়ের উপরে সিনেমাটি তৈরি। ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত লাগতে পারে, এই আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে।
এ দিন বম্বে হাইকোর্টে বিচারপতি কোলাবাওয়ালা ও বিচারপতি ফিরদৌস পুনিওয়ালার বেঞ্চের তরফে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (CBFC)-কে বলা হয় যে সিনেমার মুক্তি আটকানোর এই ট্রেন্ড বন্ধ হওয়া দরকার। সিবিএফসি যেন শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।
এমার্জেন্সি সিনেমার সহ প্রযোজক জ়ি এন্টারটেনমেন্ট এন্টারপ্রাইজের তরফে এ দিন বম্বে হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। সেন্সর বোর্ডের সম্মতি পেলে তবেই সিনেমা মুক্তি পেতে পারে। তাই দ্রুত যেন সেন্সর সার্টিফিকেট দেয়, তার আর্জি জানানো হয়।
জ়ি স্টুডিয়োর তরফে হাজির আইনজীবী ভেঙ্কটেশ ধুন্দ আদালতে জানান, সিবিএফসি ইচ্ছাকৃতভাবে মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে যাতে হরিয়ানা নির্বাচনের পর সিনেমাটি মুক্তি পায়। আইনজীবী বলেন, “এই সিনেমার সহ-প্রযোজক একজন বিজেপি সাংসদ। নিজের দলের সদস্যই যাতে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত না করে, তাই চায় ওরা (বিজেপি)। সেই কারণে সার্টিফিকেট নিয়ে এত টালবাহানা।”
আইনজীবীর এই কথা শুনে বিচারপতি কোলাবাওয়ালা বলেন, “মানে আপনি বলতে চাইছেন যে বিজেপির ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে? কেন রাজ্যের শাসক দল তার দলের সদস্যের সিনেমার মুক্তি আটকাতে চাইবে? বিরোধী দল রাজ্যের শাসকের আসনে থাকলে, তাও আমরা এই চুক্তি বিবেচনা করে দেখতে পারতাম।”
এই সিনেমায় শিখ সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে, এই যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি কোলাবাওয়ালা। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ কেন প্রভাবিত হবে? আমার সম্প্রদায় (পার্সি) নিয়ে প্রায় প্রতিটা সিনেমাতেই মজা করা হয়। আমরাও হাসি। আমাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বলে মনে করি না।”
জ়ি স্টুডিয়োর আইনজীবী এরপর কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করেন সিনেমার মুক্তিতে দেরীর জন্য। তিনি বলেন, “মাই লর্ড, কেন্দ্রের শাসক দল (বিজেপি) এইসব করাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই ওরা চায় না এই সিনেমা মুক্তি পাক।”
এর জবাবে বিচারপতি কোলাবাওয়ালা বলেন, “তার মানে আপনি বলতে চাইছেন যে শাসক দল তাঁর সাংসদের বিরুদ্ধেই কাজ করছে?”। মামলাকারীর আইনজীবী জানান যে বিজেপি সাংসদ তথা সিনেমার অভিনেত্রী ও সহ প্রযোজক কঙ্গনা রানাউতকেও নিয়ম-শঙ্খলা মানতে বলা হয়েছে।
সেন্সর বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও আদালত প্রশ্ন তোলে। বলা হয়, “এটা তো তথ্যচিত্র নয়…আপনারা কি ভাবেন যে দেশের মানুষ এতটাই বোকা যে সিনেমায় যা দেখানো হবে, তাই বিশ্বাস করবে? সৃজনশীল স্বাধীনতার কী হবে? আমাদের দেশে কোটি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহার করে…সিনেমার মুক্তি নিয়ে আপত্তির ট্রেন্ড বন্ধ করা উচিত, নাহলে সৃজনশীল স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতার কী হবে?”
সিনেমা মুক্তির জন্য ছাড়পত্র পাবে কি না, তা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেন্সর বোর্ডকে জানাতে বলা হয়েছে।