নয়া দিল্লি: একেই বলে জোর যার, মুলুক তাঁর। দেশে পুলিসি নিরাপত্তার (Police Protection) পরিসংখ্যানে উঠে এল চমকপ্রদ তথ্য। দেখা গিয়েছে, উগ্রবাদী অধ্যুষিত এলাকার বদলে রাজনৈতিক চর্চার শীর্ষে থাকা রাজ্যগুলিতেই পুলিসি পাহারা বেশি। সর্বোচ্চ পুলিসি পাহারাপ্রাপ্ত রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal), পঞ্জাব (Punjab) ও বিহার (Bihar)-র নাম।
সম্প্রতি ব্যুরো অব পুলিস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (Bureau of Police Research and Development)-র প্রকাশিত তথ্যে দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালে নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, বিচারপতি মিলিয়ে প্রায় ১৯ হাজারেরও বেশি ভিআইপি(VIP)-দের সুরক্ষার জন্য ৬৬ হাজারেরও বেশি পুলিসকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে মজার বিষয় হল, ছত্তীসগঢ়ের (Chhattisgarh) মতো মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা, যেখানে গতবছরে মোট ১১২টি এনকাউন্টার, ৪৬ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও ৭৭টি আইডি বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে পুলিসি নিরাপত্তা প্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব বা বিহারের তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
বিপিআরডি (BPR&D)-র প্রকাশিত ভিআইপির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আমাদের রাজ্য। ২০১৯ সালে রাজ্যে মোট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৩১৪২। এতজন ভিআইপিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল মোট ৬২৪৭জন পুলিসকর্মীকে। ভিআইপির সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কম হলেও পঞ্জাবে নিরাপত্তায় মোতায়েন পুলিসকর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি। ২০১৯ সালে পঞ্জাবে ভিআইপির সংখ্যা ছিল ২৫৯৪, তাদের সুরক্ষার জন্য ৭৭১৪০ন পুলিসকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছিল। সেই তুলনায় ছত্তীসগঢ়ের ভিআইপির সংখ্যা মাত্র ৩১৫। সর্বনিম্ন ভিআইপি সুরক্ষা দেয় গোয়া, সেখানে কেবল ৩২জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই সুরক্ষা পান।
ভিআইপি সংখ্যা ও পুলিসি নিরাপত্তার বিষয়ে এক উচ্চপদস্থ পুলিস আধিকারিক জানান, “পুলিসি সুরক্ষা যদি যদি সত্যিই নিরাপত্তার প্রয়োজনে দেওয়া হত, তবে কোনও রাজ্যেই সেই সংখ্যা কয়েকশোর বেশি হত না। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই মূলত পুলিসি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। উত্তর ভারতে, বিশেষ করে পঞ্জাবে একটি রীতি প্রচলিত রয়েছে যে নিরাপত্তায় মোতায়েন পুলিসের সংখ্যা দেখেই ক্ষমতার আন্দাজ করা হয়।”
আরও পড়ুন: বছর শেষ স্বস্তির খবর! বাড়ল আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা
বিপিআরডি-র প্রকাশিত তথ্যে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ভিআইপির সংখ্যা কমলেও আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে নিরাপত্তায় মোতায়েন করা পুলিসের সংখ্যা। ২০১৮ সালে গোটা দেশে মোট ভিআইপির সংখ্যা ছিল ২১৩০০, মোট ৬৩০৬১ জন পুলিসকর্মী সেই ভিআইপিদের সুরক্ষায় মোতায়েন ছিলেন। পরের বছর ভিআইপির সংখ্যা কমে ১৯৪৬৭-এ পৌঁছলেও তাদের সুরক্ষায় মোতায়েন পুলিসের সংখ্যা বেড়ে ৬৬০৪৩-এ দাঁড়ায়।
ভিআইপিদের মাথা পিছু পুলিসি নিরাপত্তার নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে রাজধানী দিল্লি (Delhi)। সেখানে ৫০১ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জন্য মোট ৮১৮২জন পুলিস কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, অর্থাৎ মাথা পিছু গড়ে ১৬জন পুলিস নিয়োগ রয়েছে। তথ্যে আরও জানা গিয়েছে, আমাদের রাজ্যে ২০১৯ সালে ভিআইপির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। বিহারে দেখা গিয়েছে ঠিক উল্টো চিত্রটাই। সেখানে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ভিআইপিদের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীর (Jammu-Kashmir), অসম (Assam), মণিপুর (Manipur) বা ছত্তীসগঢ় (Chhattisgarh), যেখানে উগ্রপন্থীদের উপদ্রব বাকি রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি, সেখানে কিন্তু পুলিসি নিরাপত্তার হার অনেক কম। যেমন, ২০১৯ সালে উপত্যকায় মোট ১১৮৪ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য প্রায় ৩০০০পুলিসকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। অসমে ১১৯৯ জন ভিআইপির নিরাপত্তায় প্রায় ৪০০০ পুলিস ছিল। মণিপুরে মাত্র ২০০ জন ভিআইপির সুরক্ষার জন্য মোতায়েন রয়েছে ২০০০ পুলিসকর্মী।