স্ত্রীকে সপ্তাহে একদিন ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে গেলে স্বামীর শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে, বলেছিলেন সমরেশ মজুমদার। আমাদের একটা ধারণা আছে মহিলারাই বুঝি ফুচকা খেতে বেশি ভালোবাসেন। তবে এমন অনেক ফুচকা-পাগল ছেলেও আছে যারা মেয়েদের গুণে গুণে দশ গোল দিতে পারে। সোজা কথায় ফুচকা ছাড়া বাঙালিকে ভাবাই যায় না। অন্যান্য রাজ্যেও পানিপুরি বা গোলগাপ্পা নামে ফুচকা বিক্রি হয়। কিন্তু বিশ্বাস করুন বাংলার ফুচকার স্বাদ আপনি বাইরে গিয়ে কোথাও পাবেন না। এহেন ফুচকা খেতে গিয়ে যদি দশবার ভাবতে হয়, তার চেয়ে দুঃখের কথা কী আর হতে পারে বলুন তো। তবে কী আর করা যাবে। ভাবতে তো হবেই, প্রাণটা তো আগে।
এবার ফুচকাতেও মিলল কারসিনোজেনিক এজেন্টস। মানে ক্যানসার হতে পারে এমন জিনিসে কিনা ঠাসা আমাদের ইহলোকের সাধের ফুচকা। কর্নাটক সরকারের স্বাস্থ্য দফতর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় আড়াইশো ‘পানিপুরি’র স্যাম্পল সংগ্রহ করে। ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে এর মধ্যে অন্তত চল্লিশটা নমুনায় আছে Brilliant Blue, Tartrazine ও Sunset Yellow-র মত ক্ষতিকর কেমিক্যাল। যেগুলো জামাকাপড়, কসমেটিকসয়ে ব্যবহার করা হয়। আর এইসমস্ত কেমিক্যাল পেটে গিয়ে রক্তের সঙ্গে মিশলে দেহের নানা অংশে টিউমার তৈরি করতে পারে। যেটা থেকে হতে পারে ক্যানসার। কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুণ্ডুরাও জানিয়েছেন, তাঁরা ফুচকার সব স্যাম্পল আরও ভালো করে পরীক্ষা করছেন। ফাইনাল রিপোর্ট এলেই পদক্ষেপ করা হবে। শুনে কন্নড়দের মনে এখন আশঙ্কা যে সরকার ফুচকাই তুলে দেবে না তো। সেটা যদি নাও হয় তাহলেও ফুচকা তৈরি ও বিক্রির ব্যাপারে কড়া বিধিনিষেধ জারি করতে পারে সিদ্দারামাইয়া সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা Food Safety and Standards Authority of India, FSSAI-ও পরীক্ষার জন্য কর্নাটক থেকে ফুচকার নমুনা নিয়ে গেছে বলে খবর। কয়েকদিন আগেই রাস্তার ধারের চিকেন কাবাবে ক্ষতিকর রাসায়নিক রোডামিন-বি পাওয়া গিয়েছে। যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে। পরে গোবি মাঞ্চুরিয়ানেও রোডামিন-বি পাওয়া যায়। সবই কর্নাটকের খাদ্য সুরক্ষা দফতরের অভিযানের ফল। ফুচকার ক্ষেত্রেও সেটাই হল। কর্নাটক সরকার ঘোষণা করেছে, খাবারে ক্ষতিকর রং মেশালে সাত বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
খাবারে রঙের জেল্লা আনতে যেসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার হয় তা সারা দেশেই পাওয়া যায়। যাঁরা ফুচকা বিক্রি করেন। তাঁরা হয়ত সমস্ত কিছু না জেনেই বাজার থেকে এইসব জিনিস কিনে এনে ফুচকায় দেন। ফলে যা কর্নাটকে হচ্ছে, তা বাংলায় হবে না। এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। ফলে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। বাঙালির তো সবই হারিয়ে গেছে। এবার ফুচকাও যদি চলে যায়। ভাবতে গেলে ভয় হয় বইকি। তবে ওই যে প্রাণটা তো আগে, তারপর রসনা। তাই ফুচকা-প্রেমের জোয়ারে না ভাসাই বোধহয় ভালো।