বিজাপুর: মাওবাদী নৃশংসতার ভয়াবহ কাহিনি উঠে এল তেলঙ্গানা, ছত্তীসগঢ় সীমানায়। স্বামীকে খুন করেছে মাওবাদীরা। কিন্তু পুলিশ শুরুতে অভিযোগ নেয়নি। মাওবাদীদের হুমকিতে চুপ ছিলেন মৃতের স্ত্রী। মাওবাদীদের হাতেই খুন হয়েছেন স্বামী, তা প্রমাণ করতে তেলঙ্গানা থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ছত্তীসগঢ়ের বস্তারে এলেন এক মহিলা। তখন তাঁর হাতে ছিল একটি পুটলি। যাতে তিনি ভরে এনেছিলেন স্বামীর দেহ পোড়ানোর পর ছাইয়ের অংশবিশেষ।
জ্যোতি মাডকা নামের এক মহিলা সম্প্রতি ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুরের একটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ, তাঁর স্বামী আয়তাকে ২ মাস আগে খুন করেছেন মাওবাদীরা। কিন্তু পুলিশ এর প্রমাণ চাইছে। এর জন্যই স্বামীর ছাই এনে পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন জ্যোতি। এর পর বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ছাইয়ের অংশবিশেষ ডিএনএ পরীক্ষারও জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, জ্যোতি ও আয়তা থাকতেন তেলঙ্গানার রাজনগরমে। জ্যোতি আয়তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। আয়তার প্রথম পক্ষের ২টি ছেলে রয়েছে। দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরই মাওবাদীদের রোষের মুখে আয়তাকে পড়তে হয়, বলে অভিযোগ তাঁর স্ত্রী জ্যোতির। বাধ্য হয়ে ওই দম্পতিকে ঘর ছাড়তে হয়। তার পর তেলঙ্গানা সীমানায় ভাট্টিগুড়া গ্রামে থাকা শুরু করেন আয়তা এবং জ্যোতি। এই গ্রাম তাদমেলতা থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে। তাদমেলতা এলাকায় ২০১০ সালে এপ্রিল মাসে ৭৫ জন নিরাপত্তারক্ষী প্রাণ হারিয়েছিলেন মাওবাদী হামলায়।
পুলিশে করা অভিযোগে, জ্যোতি জানিয়েছেন ২৪ মার্চ আয়তাকে তুলে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। ট্রাক্টর কেনার পর থেকেই মাওবাদীরা আয়তার উপর নজর রাখত বলে অভিযোগ। আয়তা পুলিশের চর হিসাবে কাজ করত বলে সন্দেহ ছিল মাওবাদীদের। জ্যোতির অভিযোগ, সেই সন্দেহের বশেই আয়তাকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। এর পর তিন দিন পর বিজাপুরের জঙ্গলে ‘জন আদালত’ বসায় মাওবাদীরা। সেখানেই প্রকাশ্যে খুন করা হয় আয়তাকে। ঘটনার কথা পুলিশকে না জানানোর হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। ভয়ে এর পর পুলিশের কাছে যাননি জ্যোতি। কিছু দিন যাওয়ার পর ভীত সন্ত্রস্ত তেলঙ্গানার ভাদ্রাচলম থানায় যান তিনি। এই অভিযোগ বিজাপুরে জানাতে বলা হয়। সেই মতো বিজাপুরের তারেম থানায় আসেন জ্যোতি। সেখানেই তাঁকে স্বামীর মৃত্যুর প্রমাণ দিতে বলা হয়। সেই মতো এক আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পেরিয়ে স্বামীর ছাই সঙ্গে নিয়ে বিজাপুররে তারেম থানায় এসেছিলেন তিনি।
ঘটনা নিয়ে বস্তার রেঞ্জের আইজি পি সুন্দররাজ বলেছেন, “মৃতের ছাই থানায় জমা দিয়েছে পুলিশের লোক। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে সেটি। এটা মাওবাদীদের দ্বারা হত্যার ঘটনা। তারেম এবং পামেদ এলাকায় মাওবাদীরা এখনও সক্রিয়। ঘটনা নিয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ২০১, ৩০২ এবং ৩৬৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।” ওই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেছেন, “মাওবাদী উর্মিলা, মানিলা এবং অন্যরা ২৪ মার্চ আয়তাকে ভাট্টিগুড়া থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পুলিশের চর সন্দেহে ২৭ মার্চ খুন করা হয় তাঁকে।”