নয়া দিল্লি: ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের মুখ্য আহ্বায়ক হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। অনেকেরই জানা নেই, এই কূটনীতিক আসলে বাংলারই মানুষ, শিলিগুড়ি তাঁর নিজের শহর। এক সময় ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ভারতের বিদেশ সচিব হিসেবেও কাজ করেছেন। সোমবার (২৬ জুন) তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। তাঁর কর্মজীবন নিয়ে লেখা এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে। আর সেখানেই উঠে এল হর্ষবর্ধন শ্রিংলার জীবনের এক অজানা অধ্যায়। ১৯৮৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এক বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হতে পারত তাঁর। বেঁচে গিয়েছিলেন ভাগ্যের জোরে।
সেই বছর অলিম্পিক্স আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওল। সেই সময় সদ্য বিদেশ মন্ত্রকে যোগ দেওয়া হর্ষবর্ধন ছিলেন ভিয়েতনামের ভারতীয় দূতাবাসে। নবীন কূটনীতিককে অলিম্পিক আয়োজনে সহায়তা করতে সিওল যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ব্যাঙ্কক হয়ে সিওল যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, যাত্রার ঠিক আগের রাতে তাঁকে আটকেছিলেন ভিয়েতনামে নিযুক্ত সেই সময়ের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত, অরুণ পট্টবর্ধন। হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে তিনি জানিয়েছিলেন, স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে তিনি ব্যাঙ্কক যাচ্ছেন। ছেলেকে আমেরিকার বিমানে তুলে দিয়ে ফিরে আসবেন। তাই, হর্ষবর্ধন যেন একদিন পর যাত্রা করেন।
আর ফেরা হয়নি অরুণ পট্টবর্ধনের। যে বিমানে ব্যাঙ্কক যাওয়ার কথা ছিল হর্ষবর্ধন শ্রিংলার, সেই বিমানেই সপরিবারে ব্যাঙ্কক রওনা হয়েছিলেন অরুণ পট্টবর্ধন। ব্যাঙ্কক বিমানবন্দরে অবতরণের ঠিক আগে রানওয়ের ডানপাশের জমিতে ভেঙে পড়েছিল বিমানটি। মৃত্যু হয়েছিল অরুণ, তাঁর স্ত্রী-পুত্র-সহ কয়েক ডজন ভারতীয়র। সব মিলিয়ে ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৭৫ জনের। তাঁদের একজন হতেই পারতেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। কিন্তু, অরুণ পট্টবর্ধনের নির্দেশেই তাঁর প্রাণ বেঁচেছিল। তাই কলকাতায় তাঁকে সামনে পেয়েই ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের কর্তা রাজীব সিং প্রশ্ন করেছেন, “ভবিতব্যে বিশ্বাস করেন আপনি?” হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, শুধু ওই একটা ঘটনা নয়, জীবনের অভিজ্ঞতায় বারেবারেই তিনি ভবিতব্যের পরিচয় পেয়েছেন।
বর্তমানে, বিশ্বমঞ্চে ভারতের মান রাখার দায়িত্ব তাঁকেই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এখনও পর্যন্ত দেশের ৫০টি শহর দেড়শোরও বেশি সভা হয়েছে জি২০-র। শিক্ষা, উন্নয়ন, শিল্প, পর্যটন – বিভিন্ন বিষয়ে সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে শ্রিংলা জানিয়েছেন, পাহাড়ের মানুষ স্বভাবতই অতিথিবৎসল হন। তিনি সেই পাহাড়ি জনতারই প্রতিনিধি। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘অতিথি দেব ভব’ এবং ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ – ভারতের এই চিরন্তন দর্শনই তাঁর মন্ত্র। তবে জি২০-র সভাগুলিকে বিভিন্ন ছোট শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকেই এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জি২০ সভাগুলি যাতে স্থানীয় জনগণকে উপকৃত করে, সেই দিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কথা মেনেই ভারতের জি২০ সভাপতিত্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। যার প্রশংসা শোনা যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী।