মধ্য প্রদেশ: মায়ের জন্য কেঁদে আকুল সন্তান অথচ কোনও এক অজানা অভিমানে দূরে সরে রয়েছে মা। ডেকে ডেকেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না মায়ের। ৬ মাসের শিশু চিতাকে কে শেখাবে শিকার? কার সঙ্গে বড় হবে সে? এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে কুনো ন্যাশনার পার্কের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের। আপাতত দূরে দূরে রাখা হয়েছে মা ও সন্তানকে। মাঝে রয়েছে দেওয়াল। সন্তানকে দেখার কোনও উৎসাহও নেই মা চিতা জোয়ালার। কেন এমন হল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও।
অনেকেরই মনে আছে, চলতি বছরের মাতৃদিবসে জোয়ালা নামে ওই চিতা ও তার চার সন্তানের ছবি প্রকাশ্যে এনেছিল কুনো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন থাকেনি। গত ১৫ মে-র পর চড়চড় করে বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। ৪৫ ডিগ্রি পেরিয়ে যাওয়ার পর অসুস্থ হতে শুরু করে ওই চিতা শাবকেরা। তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি ছোঁয়ার পর মৃত্যু হয় এক শাবকের। এরপর একে একে আরও দুই শাবকের মৃত্যু হয়। গত বছর নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল ২০টি চিতাকে। তার মধ্যে ৬ চিতার মৃত্যু হয়েছে।
এরপরই পশু বিশেষজ্ঞরা দেখেন, বেঁচে থাকা একমাত্র শাবকের শারীরিক অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়য ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে সে। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে তাকে আলাদ করে কার সাধ্য! তবে তাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন কর্মীরা। মা চিতা জোয়ালার অনুপস্থিতিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ওই শাবককে। দেখা যায় তার ওজন নেমেছে দেড় কেজিতে। চিকিৎসকেরা তাকে সুস্থ করে তোলে ও আলাদা একটি খাঁচায় রাখার ব্যবস্থা করে।
৮ দিন দূরে থাকার পর মাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে ওই ৬ মাসের ওই চিতাশাবক। কিন্তু মায়ের কাছে নিয়ে যেতে যা ঘটল, তাতে অবাক হয়ে যান চিকিৎসকেরাও। দেখা যায়, সন্তানকে একটু শুঁকে দূরে চলে যাচ্ছে তার মা। মায়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই শাবক। তাকে আবারও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। ফেরার পর মায়ের সঙ্গে দেখা করানোর চেষ্টা হয় ফের। পশু চিকিৎসকেরা সঙ্গে নিয়ে যায় শিশুটিকে। কিন্তু তারপর যা ঘটেছিল, তা ভাবতেই পারেনি কুনো কর্তৃপক্ষ। দেখা যায়, নিজের সন্তানকে আক্রমণ করতে আসছে মা জোয়ালা। এরপর আর দেখা করানোর চেষ্টা হয়নি। আপাতত একা একাই বড় হচ্ছে ওই চিতাশাবক। এখনও পর্যন্ত তার নামকরণ করা হয়নি। যদিও শাবকের যত্নের অভাব হচ্ছে না, তবে মায়ের সঙ্গে না থাকলে শিকার কীভাবে শিখবে, সেটাই হয়ে উঠছে চিন্তার কারণ।