নয়া দিল্লি: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুটো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান প্রকাশ্যে আনল চিন। দুটোই সিক্সথ জেনারেশন ফাইটার জেট বলে দাবি করছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। মুখে স্বীকার না করলেও চিনের এই জোড়া যুদ্ধবিমানে হতবাক আমেরিকাও। সে দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ অর্থাত্ পেন্টাগনের কর্তারা মনে করছেন, আগামী ৫ বছরে চারশোরও বেশি সিক্সথ জেনারেশন যুদ্ধবিমান তৈরি করে ফেলবে চিন। সেটা হলে আমেরিকার পক্ষেও চিনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন হবে।
পাকিস্তান ইতিমধ্যেই চিনের কাছ থেকে ৪০টি অত্যাধুনিক ফাইটার জেট কিনতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। যে কোনও সময়ে চিন – পাকিস্তান চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে। আর সেটা হলে ভারতের সামনে নতুন থ্রেট। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ফাইটার জেট প্রোডাকশন লাইন তৈরি করছে শি জিনপিংয়ের দেশ। এতটাই দ্রুত যে আমেরিকা আগামী ৫ বছরেও এর ধারেকাছে পৌঁছতে পারবে না।
পেন্টাগনের না হয় চিনের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়ার ক্ষমতা আছে। ভারতের কী হবে? এই মুহূর্তে ভারতের হাতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। চিন সিক্সথ জেনারেশন যুদ্ধবিমান নামিয়ে দিল। অথচ ভারতের হাতে ফিফথ জেনারেশন যুদ্ধবিমান-ই নেই। রাফাল অত্যন্ত কার্যকর হলেও এটি ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশন যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনায় ৪২ স্কোয়াডেন যুদ্ধবিমান প্রয়োজন। এখন আছে ৩১ স্কোয়াডেন যুদ্ধবিমান।
আগামী দু-তিন বছরে আরও তিন ডজন মিগ অবসর নেবে। তখন যুদ্ধবিমানের অভাব আরও, আরও প্রকট হবে। চাহিদা আর সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি কিছুটা হলেও মেটাতে পারত তেজস। ২০২১ সালে ৮৩টি তেজস মার্ক ওয়ান এ বিমানের বরাত দেয় প্রতিরক্ষামন্ত্রক। এর আগে আরও ৯৭টি যুদ্ধবিমানের বরাত দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩-এর শেষে প্রথম যুদ্ধবিমান হাতে আসার কথা ছিল। কিন্তু এক বছর পরও পরেও একটিও বিমান হাতে পায়নি সেনা। মার্কিন সংস্থা জিই সময়ে ইঞ্জিন ডেলিভারি দিতে পারেনি। কবে ডেলিভারি হবে, কবে প্রথম বিমান হাতে আসবে – জানা নেই।
চলতি বছর দিপাবলির আগে সুখোই যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র।সেই কাজ সবে শুরু হয়েছে। ব্রহ্মস বহন করতে সক্ষম আপগ্রেডেড সুখোই হাতে আসতে আসতেও সেই ২০২৭ বা ২০২৮ সাল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, বিদেশি কোম্পানি এখানেই বিমান তৈরি করবে এবং তাতে ভারতীয় যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক – এটাই কেন্দ্রের নীতি। এই পথে না চললে আমরা কোনওদিন প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভর হতে পারব না। অর্থাত্ তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এই শর্তের জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধবিমান হাতে পাচ্ছে না বায়ুসেনা।
এতদিন হয়ত এই নীতি নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ ছিল না। কিন্তু চিন, পাকিস্তান যে পথে হাঁটছে, তাতে ভারতকে নতুন করে ভাবতে হবে। মেড-ইন-ইন্ডিয়া যেমন চলছে চলুক, কিন্তু এই মুহূর্তে সেসব পাশে সরিয়ে সরাসরি অত্যাধুনিক কিনতে হবে। বায়ুসেনা কর্তারাই কেন্দ্রকে সেই সুপারিশ করছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত যে কোনও মুহূর্তে আকাশপথে যুদ্ধের জন্য তৈরি। কিন্তু শক্রর উপর নজর রেখে আমাদেরও শক্তি বাড়াতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত বায়ুসেনাকর্তাদের বক্তব্য, ভারতের সামনে সেরা বিকল্প বলতে দুটো। এক – আমেরিকার তৈরি এফ-১৬। দুই- রাশিয়ার তৈরি সুখোই-৫৭। একইসঙ্গে তাঁরা জানালেন, আমেরিকার থেকে যুদ্ধবিমান কিনলেও প্রযুক্তি পাওয়াটা খুব কঠিন। রাশিয়া সেই জায়গায় প্রযুক্তি হস্তান্তর করেই সুখোই-৫৭’র চুক্তি করতে তৈরি। একধাপ এগিয়ে রুশ সংস্থাটি জানিয়েছে, ভারত বরাত দিলে তাঁরা সুখোই-৫৭’এ ইন্ডিয়া স্পেসিফিক আপগ্রেডেশন করে দেবে।
এখন কথা হল, প্রতিরক্ষামন্ত্রক কী চাইছে? রাজনাথ সিংয়ের মন্ত্রক জানাচ্ছে, নতুন যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন ও তাঁর বাছাই নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হচ্ছে। ৬ মাসের মধ্যে তাঁরা রিপোর্ট দেবে। সেই কমিটির সুপারিশ খতিয়ে দেখে যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু এই বিভিন্ন কমিটির চক্করে ভারতের নিজস্ব ফিফথ জেনারেশন যুদ্ধবিমান তৈরির প্রকল্প অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে।