নয়া দিল্লি: ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় অপেক্ষাকৃত কম মহিলা বিচারপতির সংখ্যা নিয়ে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন ওঠে। আইনি পেশায় মহিলা ও পুরুষ অনুপাতকে ‘অত্যন্ত খারাপ’ বলেছেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি শনিবার এই পেশায় মহিলাদের জন্যও সমান সুযোগের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, দেশে প্রতিভাবান আইনজীবীর কোনও অভাব নেই। তিনি সকলের সামনে আইনি পেশায় মহিলা ও পুরুষ আইনজীবীর একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। উদাহরণ স্বরূপ তিনি তামিলনাড়ুর চিত্রটাই সকলের সামনে মেলে ধরেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, “পরিসংখ্যান বলছে যেখানে ৫০,০০০ পুরুষ রয়েছে। সেখানে মাত্র ৫ হাজার রয়েছেন মহিলা প্রতিনিধি।” তিনি কার্যত নিজে মুখে স্বীকার করে নিলেন আইনের পেশা সকলকে সমান সুযোগ দেয় না। তামিলনাড়ুর মতো এই পরিসংখ্যানটা দেশের সব জায়গাতেই দেখা যায়। তবে তিনি আশাবাদীও। এই দিন বদলাবে। তিনি বলেন, ‘তবে সময় বদলাচ্ছে। জেলা বিচারব্যবস্থায় সাম্প্রতিক নিয়োগে ৫০ শতাংশের বেশি মহিলা প্রার্থী রয়েছে। কিন্তু আমাদের নারীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে যাতে যাতে তারা পথভ্রষ্ট না হয় কারণ তাঁরা জীবনে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বহুমুখী দায়িত্ব গ্রহণ করে।’
তামিলনাড়ুতে জেলা আদালতে একটি অতিরিক্ত কোর্ট বিল্ডিং তৈরির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ও তামিলনাড়ু মুখ্য়মন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে দেশের বিচার ব্যবস্থায় দেশের অসম প্রতিনিধিত্বের কথা তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি এর পিছনে সম্ভাব্য কারণও ব্যাখ্যা করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, “মহিলাদের দুটি প্রচলিত স্টিরিওটাইপ রয়েছে। যার ফলে তাঁদের সমান সুযোগ দেওয়া হয় না। প্রথমত, নিয়োগকারী সংস্থা মনে করে মহিলারা বেশিক্ষণ কাজে সময় দিতে পারবেন না। কারণ তাঁদের অন্যান্য পারিবারিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হয়। আমাদের সকলের বোঝা উচিত, সন্তান লালন-পালন করা একটি পছন্দের বিষয় এবং এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মহিলাদের যাতে শাস্তি পেতে না হয়। একজন পুরুষ আইনজীবীও সন্তানের দেখভাল করতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “কিন্তু আমাদের সমাজ সেই দায়িত্বটা কেবলমাত্র মহিলাদের উপরই চাপিয়ে দেয়। আমরা পরিবারের সব কিছু দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে তুলে দিই।” আর দ্বিতীয় স্টিরিওটাইপটি হল, মহিলাদের নিয়োগ করা হলে যৌন নিগ্রহকে অভিযোগের একটি দিক থেকে যায়। অনেকেই মনে করেন অফিসে কোনও মহিলা কর্মী না থাকা নিরাপদ। গতকাল নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত লিঙ্গ বৈষম্যের দিকটিও তুলে ধরেন। এবং তা ঘোচানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় মাদ্রাস হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে এই বৈষম্য ঘুচিয়ে মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেছেন মহিলা আইনজীবীদের জন্য আদালত চত্বরে ক্রেশের ব্যবস্থা করা হোক। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অনেক সুবিধাও হবে এবং তাঁদের সমান সুযোগও দেওয়া হবে। লিঙ্গবৈষম্য ভুলে তিনি মহিলাদেরও আইনি বিভাগে নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি।