কলকাতা: মমতার প্রশ্নবাণে জর্জরিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। সোমবার গণটিকাকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে সব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যবাসীর সুরক্ষার কথা ভেবেই বৈঠকে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্ন তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মিলেছে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাবও।
আগামী শনিবার থেকে দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে টিকাককরণ প্রক্রিয়া। তার আগেই রাজ্যগুলির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি যাচাই করে নিতে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী প্রতিষেধকের ছাড়পত্র ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “কেবলমাত্র দুটি প্রতিষেধকই বেছে নেওয়া হল কেন? এক্ষেত্রে রাজ্যের কোনও মতামত নেওয়া হয়নি, কেন্দ্রই নির্বাচন করেছে। যেকোনও প্রতিষেধক প্রয়োগের আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজন। এই ভ্যাকসিনগুলির ক্ষেত্রে তা করা হয়েছে?”
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, দুটি ভ্যাকসিনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা। থাকলে তা আগেই জানানো দরকার। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সব রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীদেরই আশ্বস্ত করে বলেন, “ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকেই, তবে তা খুব সামান্য। কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও রয়েছে। এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই।”
#WATCH live via ANI: PM Modi interacts with CMs of all states via video conferencing. #COVID19 https://t.co/xyts3FO26b
— ANI (@ANI) January 11, 2021
দুটি ভ্যাকসিনকেই নির্বাচন করার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরও চারটি প্রতিষেধক ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছে। টিকাকরণের দ্বিতীয় পর্যায় শুরুর হওয়ার মধ্যে ওই টিকাগুলি প্রস্তুত হয়ে যাবে।” একইসঙ্গে তিনি ভারতীয় টিকার প্রশংসা করে বলেন, “ভারতে তৈরি প্রতিষেধক বিদেশে তৈরি প্রতিষেধকের তুলনায় অনেকটাই সস্তা। ছাড়পত্র পাওয়া দুটি ভ্যাকসিনই যে ভারতে তৈরি, তা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন আনতে হলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হত।”
আরও পড়ুন: অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু, দুপুরেই শহরে ঢুকছে করোনার ভ্যাকসিন
অন্যদিকে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ কে পালের কোর্টেই বল ঠেলে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, কেন্দ্রের নির্বাচিত দুটি করোনা টিকাই সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত ও কার্যকরী। ভ্যাকসিনগুলির তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নির্বাচিত ভ্যাকসিনগুলির গবেষণা একাধিক জার্নালেও ছাপানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলির টিকাকরণের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, টিকাকরণের জন্য রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রথম ধাপে যে স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির যোদ্ধারা করোনা টিকা পাবেন, তাঁদের ইতিমধ্যেই চিহ্নিতকরণ করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য কো-উইন অ্যাপে আপলোড করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “প্রথম ধাপের টিকাকরণ প্রক্রিয়ার জন্য ৫.৮ লাখ সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রথম সারির যোদ্ধাদের মধ্যে ২.৫ লাখ পুলিস ও ১.৫ লাখ পুরসভার কর্মীদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রাপকের যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্যও নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করে বলেন, “যাঁরা পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের নামও প্রথম সারির যোদ্ধাদের তালিকায় নথিভুক্ত করা উচিত।” এরপরই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে টিকাকরণ নিয়ে মোক্ষম প্রশ্নটি করেন। বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিন কোটি প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের বিনামূল্যে করোনা টিকা দেওয়া হবে। এর সাপেক্ষেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “প্রথম সারির যোদ্ধারা বিনামূল্যে করোনা টিকা পেলেও বাকি ১২৭ কোটি দেশবাসীর কী হবে? তাঁদের ক্ষেত্রে কি রাজ্যগুলিকে খরচ দিতে হবে?”
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাব না দিলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, টিকাকরণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিয়ে দ্বিতীয় একটি বৈঠক করা হবে। ভ্যাকসিনের রোডম্যাপ নিয়েও মেলেনি কোনও সদুত্তর।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রাণ হারালেন স্ত্রী ও আপ্ত সহায়ক