নয়া দিল্লি: শাসক দলের ক্ষমতা হাতছাড়া হয়েছে অনেক আগেই। একের পর এক রাজ্যের গদিও হাতছাড়া হচ্ছে। এবার বিরোধী দলের তকমাও যাতে হাতছাড়া না হয়, তারজন্য দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করতে চলেছে কংগ্রেস(Congress)। আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই এই কর্মসূচি শুরু হতে চলেছে। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি (Petrol-Diesel Price Hike)নিয়েই দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হতে চলেছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা (Randeep Surjewala) জানিয়েছেন, আগামী ৩১ মার্চ সকাল ১১টা থেকে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করা হবে। সাধারণ মানুষ তাদের বাড়ির বাইরে গ্যাস সিলিন্ডার ও থালা বাসন বাজিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন, যাতে ‘বধির’ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউনের সময়, স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থালা-বাসন বাজাতে বলেছিলেন। বিজেপি সরকারের সেই উদ্যোগকে কটাক্ষ করেই পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির সূচনা করা হচ্ছে। জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার জানিয়েছেন, মোট তিন ধাপে কংগ্রেস ‘মুদ্রাস্ফীতি মুক্ত ভারত অভিযান’ চালাবে।
তিনি বলেন, “মোদী সরকার দেশের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নির্বাচনের সময় জনগণের ভোট আদায়ের জন্য পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস সিলিন্ডার, প্রাকৃতিক গ্যাস ও সিএনজির দামে ১৩৭ দিন কোনও পরিবর্তন না করা হলেও, গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রতিটি পরিবারের মাসিক হিসাব ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিনই পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি এবং গ্যাস সিলিন্ডার, পিএনজি-সিএনজি-র ক্রমবর্ধমান দাম প্রমাণ দিচ্ছে যে, মোদী সরকার নাগরিকদের লুট করে, নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধির নীতিতে কাজ করছে।”
বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে কংগ্রেসের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, “আজ আবারও পেট্রোল ও ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৮০ পয়সা বাড়িয়েছে মোদী সরকার। গত পাঁচ দিনে এই নিয়ে চতুর্থবার দাম বাড়ল। বিজেপি যখন ২০১৪ সালের মে মাসে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, তখন পেট্রোল এবং ডিজেলের উপর আবগারি শুল্ক ছিল যথাক্রমে ৯টাকা ২০ পয়সা প্রতি লিটার এবং ৩ টাকা ৪৬ পয়সা। বিগত গত আট বছরে বিজেপি সরকার পেট্রোলে আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে ১৮ টাকা ৭০ পয়সা। ডিজেলের ক্ষেত্রেও প্রতি লিটারে ১৮ টাকা ৩৪ পয়সা শুল্ক বসে। অর্থাৎ পেট্রোল ও ডিজেলের উপর আবগারি শুল্ক যথাক্রমে ৫৩১ শতাংশ এবং ২০৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যখন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ১০৮ ডলার। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই সময়ে পেট্রোল এবং ডিজেল যথাক্রমে ৭১ টাকা ৪১ পয়সা এবং ৫৫ টাকা ৪৯ পয়সায় পাওয়া যেত। আজ দিল্লিতে পেট্রোল ও ডিজেল যথাক্রমে ৯৮ টাকা ৬১ পয়সা এবং ৮৯ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে ৷”
রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়েও কংগ্রেস আমলে গ্যাসের দামের সঙ্গে বর্তমান দামের তুলনা করা হয়েছে। ভর্তুকি নিয়েও কটাক্ষ করা হয়েছে বিজেপি সরকারকে। কেন্দ্রের শাসকদলের এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই তিন ধাপে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপে ৩১ মার্চ ‘বধির’ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাধারণ মানুষকে তাদের বাড়ির বাইরে গ্যাস সিলিন্ডার ও থালা বাসন বাজিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর আবেদন জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ২ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিল অবধি জেলাস্তরে ধর্ণা কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ এপ্রিল রাজ্য স্তরে ‘মূল্য়বৃদ্ধি মুক্ত ভারতের লক্ষ্যে বিভিন্ন সদর দফতরে ধর্ণা ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।