দেশে ফের কমল করোনা সংক্রমণ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হজার ৭৭ জন। কমেছে সংক্রমণের হারও। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, তৃতীয় ডোজ়ের সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক চাহিদার উপর ভিত্তি করেই নেওয়া হবে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ওমিক্রনই শেষ নয়, এরপরও করোনার নতুন ভ্য়ারিয়েন্ট আসতে পারে এবং তা আরও বেশি সংক্রামকও হতে পারে। অন্যদিকে, দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে দেশের টিকাকরণের হার। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত হয়ে গিয়েছেন। করোনা ও ওমিক্রন সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট দেখে নিন এক নজরে-
মহারাষ্ট্রে করোনার গ্রাফ কমতে শুরু করেছে। আর এরই মধ্যে মাস্ক পরার দরকার নেই – মহারাষ্ট্র সরকার এমন আলোচনা করছে বলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। শুক্রবার মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সে রাজ্যের মন্ত্রিসভা ‘মাস্ক-ফ্রি’ হওয়ার বিষয়ে কোনও আলোচনা করেনি। করোনা ভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যবাসীকে অবশ্যই মাস্ক ও অন্যান্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা পরে থাকতে হবে।
কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে সুধাকর শুক্রবার জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র থেকে কর্ণাটকে আসা যাত্রীদের আর আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। সড়ক পথ, রেল পথ ও বিমান পথ – সব ক্ষেত্রেই এই নিয়ম চালু হচ্ছে। তবে করোনা টিকার সার্টিফিকেট অবশ্য বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হবে।
শুক্রবার দিল্লিতে মোট ৯৭৭ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। রাজধানীতে বর্তমানে পজিটিভিটি রেট ১.৩৭ শতাংশ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। বর্তমানে সেখানে করোনার অ্যাকটিভ কেস ৪ হাজার ৮১২।
শুক্রবার মুম্বইয়ের কোভিড বুলেটিন অনুযায়ী, ৩৬৭ জন নতুন করে কোভিড আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এর পাশাপাশি মৃত্য়ুও হয়েছে এক জনের। মুম্বইয় শহরে বর্তমানে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ২১৯ জন।
করোনা কালে দীর্ঘদিন ট্রেনে রান্না করা খাবার দেওয়া বন্ধ রেখেছিল আইআরসিটিসি। এবার করোনার সংক্রমণে কিছুটা লাগাম লাগতেই পুনরায় আইআরসিটিসি রান্না করা খাবার দেওয়া শুরু করে দিচ্ছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের ট্রেনে পাওয়া যাবে রান্না করা খাবার।
আটটি দেশের থেকে আগত বিমানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরও এক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হংকং। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে নেপালের নামও। হংকং প্রশাসনের তরফে শুক্রবার ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন সহ আটটি দেশ থেকে আগত বিমানের উপর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্রমবর্ধমান কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হংকং প্রশাসন নেপালের উপর ৪ মার্চ পর্যন্ত একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অন্য দেশগুলির মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন।
যে ভ্রমণকারীদের সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের জন্য এবার থেকে ব্রিটেনে প্রবেশের ক্ষেত্রে আর কোনও পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। নতুন নির্দেশিকায় এমনটাই জানিয়েছে সে দেশের প্রশাসন।কোভিড -১৯ পরিস্থিতির কারণে ব্রিটেনের সরকার গত দুই বছর ধরে কড়া বিধিনিষেধ জারি রেখেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মবিধি পুনরায় শিথিল করতে শুরু করেছে বরিস জনসনের সরকার। শুক্রবার থেকে ব্রিটেনের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, টিকাপ্রাপ্ত ভ্রমণকারীরা সে দেশে প্রবেশের জন্য আর করোনা পরীক্ষা না করালেও হবে।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আইসিএমআরের ডিরেক্টর জেনারেল ডঃ বলরাম ভার্গব জানান, করোনার একটি ভ্য়ারিয়েন্টে সংক্রমিত হলে শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, তা অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না। সেই কারণেই একবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ে অনেকেই পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে টিকাকরণের ফলে সংক্রমণ থেকে অসুস্থতা গুরুতর আকার নেয়নি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও মৃত্যুর হারও তুলনামমূলকভাবে অনেকটাই কম। করোনাবিধি মেনে চললেই এই সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
টিকাকরণের গতি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল বলেন, “বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের করোনা টিকাকরণ চলছে। তবে নাবালক, প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ ও প্রিকশন ডোজ় মিলিয়ে বলা চলে যে ভাল গতিতেই চলছে টিকাকরণ কর্মসূচি। গত বছর অক্টোবর মাসে প্রতিদিন গড়ে ৭৭.৫৫ লক্ষ করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছিল। নভেম্বরে সেই সংখ্যাটি কমে দাঁড়ায় ৫৯.৩২ শতাংশে। ডিসেম্বর এই সংখ্যাটি ছিল ৬১.৯১ লক্ষ এবং জানুয়ারিতে দৈনিক গড়ে ৬৯.৪৯ শতাংশ করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৫১ লক্ষ করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৯৬ শতাংশই করোনা টিকার প্রথম ডোজ় এবং ৭৮ শতাংশ দুটি ডোজ়ই পেয়েছেন। আমরা অনুরোধ করছি যেসমস্ত নাবালক-নাবালিকারা এখনও করোনা টিকা নেননি, তারা যেন দ্রুত টিকা নেন।”
বাকি দেশের মতো ভারতেও সাধারণ মানুষদের করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ়ের (Third Dose of COVID Vaccine) আদৌই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা, তা নিয়েও একাধিক ব্যক্তির মনে প্রশ্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ় নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের তরফে জানানো হল, প্রাপ্তবয়স্কদের করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ় দেওয়ার সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক চাহিদার উপর ভিত্তি করেই নেওয়া হবে।
মৃতের সংখ্যার ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে কেরল। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩৪১। এরপরে রয়েছে মহারাষ্ট্র, সেখানে একদিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪৫।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল যে, দেশের ৫টি রাজ্য থেকেই মোট আক্রান্তের ৬৭ শতাংশের খোঁজ মিলছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় কেরলে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৪২০ জন। এরপরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬২৪৮ জন। কর্নাটকেও গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ১৯ জন, তামিলনাড়ুতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৯২ এবং রাজস্থানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪৯১। এই পাঁচটি রাজ্য থেকেই গত ২৪ ঘণ্টায় মোট সংক্রমণের ৬৩.৩১ শতাংশের খোঁজ মিলেছে। কেবল কেরল থেকে ৩১.৭২ শতাংশ আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় কেরলে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৪২০ জন।
সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও কমে ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮০২-এ পৌঁছেছে। গত ২৪ ঘণ্টাতেই সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমেছে ৯২ হাজার ৯৮৭।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিনেই ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৪০৭ জন সুস্থ হয়ে ওঠায় দেশে মোট সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪ কোটি ১৩ লক্ষ ৩১ হাজার ১৫৮-এ। বর্তমানে দেশে সুস্থতার হার ৯৭.১৭ শতাংশ।
মৃতের সংখ্যাও বিগত কয়েকদিন ধরে হাজারের কাছাকাছি থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬৫৭ জনের। এই নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৭ হাজার ১৭৭-এ।
আক্রান্তের সংখ্য়ার পাশাপাশি দেশের সংক্রমণের হারও হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার ৩.৮৯ শতাংশ। সাপ্তাহিক সংক্রমণের হার ৫.৭৬ শতাংশ।
দেশে ফের অনেকটাই কমল করোনা সংক্রমণ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৭৭ জন।