কলকাতা: একেবারে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কারোর কিচ্ছু করার নেই। প্রতিলিপি গঠন করতে গিয়ে ভুল করছে করোনাভাইরাস (COVID)। ফলে ভুল গঠনের অপত্য জন্মাচ্ছে। ডারউইনের ‘সারভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট’ যুক্তিতে যে বেঁচে যাচ্ছে, সে আরও ভুল করছে। তার ফলেই ভাইরাসের এই মিউটেশন হচ্ছে। যা ফাঁকি দিচ্ছে আরটিপিসিআর পরীক্ষাকে। ফলস্বরূপ করোনা আক্রান্ত রোগীর পজিটিভ রিপোর্টও হয়ে যাচ্ছে নেগেটিভ। অর্থাৎ ‘ফলস নেগেটিভ।’
ভাইরাস কী তাহলে ফাঁকি-ই দিয়ে যাবে! কোনওভাবেই তাকে আটকানো সম্ভব নয়? এ বিষয়ে ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক চিকিৎসক সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের সঙ্গে টিভি নাইন বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মূলত ডিলিশন মিউটেশন ও নমুনা সংগ্রহে ভুল থেকে যাওয়ার জন্যই ভাইরাসকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “ভাইরাসের আরএনএতে ডিলিশন মিউটেশন ও সাবস্টিটিউশন মিউটেশন দেখা যাচ্ছে। স্পাইক প্রোটিনের ৬৯ ও ৭০ তম অ্যামাইনো অ্যাসিড অর্থাৎ হিস্টিডিন ও ভ্যালিন উধাও হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ভাইরাসকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ছাড়াও ভাইরাসের বিভিন্ন জায়গায় সাবস্টিটিউশন মিউটেশন দেখা যাচ্ছে।” অর্থাৎ ভাইরাসের চারিত্রিক গঠনে বদল আসছে।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য নমুনা সংগ্রহে বাড়তি সতর্ক হওয়া এবং সঠিক সময়ে নমুনা সংগ্রহের কথা বলেন সিদ্ধার্থবাবু। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়েছে ডবল মিউট্যান্স স্ট্রেন। যা কি না দু’টি স্ট্রেনের সংমিশ্রণ। ভবিষ্যতেও কি এই ধরনের মিউট্যান্ট গড়ে ওঠা সম্ভব? সে বিষয়ে তিনি জানান, ভাইরাস আসলে প্রুফ রিডিংয়ে গণ্ডগোল করছে। তাই প্রতিলিপিকরণের ক্ষেত্রে ভাইরাসে একাধিক পরিবর্তন হচ্ছে। আর সেই পরিবর্তনই কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
তবে ভ্যাকসিন এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকরী হবে কি না, সে প্রশ্নে অন্তত ইতিবাচক কথাই বলছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানান, বিভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরি হয় আরএনএর সম্পূর্ণ গঠনকে লক্ষ্য করে। আবার কোনও ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভাইরাসকে লক্ষ্য করে ‘হোল ভাইরাস’ ভ্যাকসিনও তৈরি হয়। তাই ভাইরাসে সামান্য পরিবর্তন এলে ভ্যাকসিন যে কাজ করবে না, এই ধারণা ভুল।
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর গতিতে এগোচ্ছে করোনা, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত প্রায় ৩ লাখ, মৃত্যু ২,০২৩ জনের