নয়া দিল্লি: ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করে জোট বেঁধেছে অবিজেপি দলগুলি। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ (INDIA)-র শরিক সিপিএম-ও। কিন্তু, সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সাংগঠনির কাঠামো নিয়েই প্রশ্ন উঠল। সিপিএমের মতে, ‘ইন্ডিয়া’ জোট নয়, ‘ব্লক’। তাই কোনও কমিটিতে আপাতত প্রতিনিধি না দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পলিটব্যুরোর বৈঠকে। যদিও সিপিএমের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য কারণও উঠে আসছে।
১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর, দু-দিন ব্যাপী সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক বসেছিল দিল্লিতে। এই বৈঠকেই ইন্ডিয়া জোটের বিভিন্ন কমিটির জন্য প্রতিনিধির নাম স্থির করা হবে বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। কিন্তু, বৈঠক শেষে ইন্ডিয়া জোটে কোনও প্রতিনিধি দেওয়া হবে না বলেই জানাল সিপিএম।
সিপিআইএম সূত্রে খবর, ইন্ডিয়া ব্লকে কো-অর্ডিনেশন কমিটিতে প্রতিনিধি দিলে পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে স্ব-বিরোধিতা করা হত। সেই কথাই দু-দিনের পলিটব্যুরো বৈঠকে আলোচনায় তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের প্রতিনিধিরা।
এর আগে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। তারপরই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রথম কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকের দিনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করে ইডি। ফলে ডি রাজার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে রাজনৈতিক মহলে। কমিটিতে সিপিএমের প্রতিনিধি থাকলে ফের এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। সেক্ষেত্রে জোটের তরফে কোনও বিবৃতি দিলে তাতে স্বাক্ষর করতে হবে সিপিএমের প্রতিনিধিকেও। অথচ সিপিএম পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতির নানা ইস্যুতে ‘মাথা’-কে ধরার দাবিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির দফতর অভিযান করবে বলে সুর চড়াচ্ছে। ফলে সেটা স্ব-বিরোধিতা হত বলেই বৈঠকে বুঝিয়েছেন বাংলার প্রতিনিধিরা। এমনকি, দলীয়-কর্মী সমর্থকদের কাছেও তা নিয়ে ভুল, বিভ্রান্তিকর বার্তা যেত। সেই জায়গার কথা পলিটব্যুরোতে তুলে ধরেন বাংলার প্রতিনিধিরা। সেটাই মেনে নেন অন্য নেতারা।
পশ্চিমবঙ্গের মতো একই সমস্যা কেরলেও রয়েছে। কারণ, সেখানে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই সিপিএমের। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে অস্ত্র করে ভোট ময়দানে ঝাঁপানোই লক্ষ্য। সেখানে একসঙ্গে লড়াই করা যাবে না। এদিকে, কেরল আর পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের মূল ভিত্তি। ফলে এই দুই রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের অবস্থানকে গুরুত্ব দিতেই হবে অন্য নেতাদের। সেজন্যই জোটের সব কমিটি থেকে সিপিএম দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
আবার সিপিএমের কাছে, ‘জোট’ অর্থাৎ ‘ফ্রন্ট’ শব্দের অর্থ, এক সুরে কথা বলে। ‘ইন্ডিয়া’-য় বিভিন্ন দলের ভিন্ন-ভিন্ন মত রয়েছে। তাই এটি ‘জোট’ নয়, ‘ব্লক’ বলেই মনে করছে সিপিএম। আবার ‘ইন্ডিয়া’-র একাধিক কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটি তৈরি করায় বিশ্বাস করছে না সিপিএম। তাদের মতে, কমিটি তৈরির বদলে জনসংযোগ বাড়ানো জরুরি। মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলি নিয়ে দেশজুড়ে আরও প্রচার বাড়ানো হোক। আলাদা করে কোনও কমিটি নয়, বরং এলাকা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা পলিটব্যুরো বৈঠকে উঠে এসেছে।
অন্যদিকে, দু-দিনের পলিটব্যুরোর বৈঠকে অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল, কেন্দ্রের ‘এক দেশ, এক ভোট’ করার সিদ্ধান্ত। সিপিএমের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ গণতন্ত্রের বিরোধী। আবার ত্রিপুরা বিধানসভা উপ-নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল, বিজেপি ‘গণতন্ত্রের হত্যা করেছে’ বলেও পলিটব্যুরোর বৈঠকে উল্লিখিত হয়। জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে জওয়ানদের শহিদ হওয়ার ঘটনা নিয়ে পলিটব্যুরোর বৈঠকে শোকপ্রকাশ করা হয়েছে।