দেরাদুন: তিনি বিবাহিত, দুই বছরের এক সন্তানও আছে। সেনার কাজে থাকতে হয় বাড়ি থেকে অনেক দূরে। এমনই এক সময়ে এক নেপালি ‘বার ড্যান্সারে’র সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত প্রেম হয়েছিল সেনা কর্তার। এই প্রেমের সূচনা হয়েছিল বাংলার শিলিগুড়ি শহরে। সেনা কর্তা দেরাদুনে বদলি হয়ে গেলেও এই অবৈধ প্রেমে কোনও বাধা পড়েনি। নয়া শহরে পাড়ি দিয়েছিলেন দুজনেই। কিন্তু, শেষটা মোটেই মধুর হল না। বিয়ে করার জন্য চাপ দিতেই, ওই সেনা কর্তার অনিয়ন্ত্রিত রাগের শিকার হলেন ওই ২৫ বছর বয়সী নেপালি যুবতী। আর তাঁকে হত্যার দায়ে, সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর), লেফটেন্যান্ট কর্নেল রামেন্দু উপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে দেরাদুন শহরের পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে নেপালি যুবতীকে, মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে হত্যা করে, প্রকাশ্য রাস্তায় ফেলে যাওয়ার অভিযোগ করেছে পুলিশ।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০২০ সালে। সেই সময় বাংলার শিলিগুড়িতে নিযুক্ত ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল রামেন্দু উপাধ্যায়। সেখানে এক ডান্সবারে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ওই নেপালি যুহতীর। নেপালের নাগরিক হলেও, তিনি শিলিগুড়িতে ‘বার ড্যান্সারে’র কাজ করতেন। আলাপের পর, দুজনের সম্পর্ক গড়িয়েছিল প্রেমে। তাঁরা দুজনে একসঙ্গে থাকাও শুরু করেছিলেন। দেরাদুনের এসএসপি দলীপ সিং কুনওয়ার জানিয়েছেন, চলতি বছরের জুলাইয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে দেরাদুনে বদলি করে দেওয়া হয়। তারপরও দুজনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। কিছু সময় পরক, ওই নেপালি যুবতীকেও দেরাদুনে নিয়ে এসেছিলেন ওই সেনা কর্তা। তবে, এরপরই তাঁর স্ত্রী, তাঁর এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন। সেনা কর্তার স্ত্রীয়ের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদ হয়েছিল নেপালি যুবতীটির।
অশান্তি এড়াতে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল রামেন্দু, দেরাদুনে এক ভাড়া বাড়িতে রেখেছিলেন নেপালি যুবতীকে। প্রায় রোজই তাঁদের দেখা হত। এরপরই, তাঁকে বিয়ে করার জন্য সেনা কর্তাকে চাপ দিতে শুরু করেছিলেন ওই মহিলা। একদিকে, স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি, অন্যদিকে প্রেমিকার বিয়ের চাপ – দুইয়ের জেরে অতিষ্ট সেনা কর্তা সিদ্ধান্ত নেন, নেপালি মহিলার হাত থেকে নিস্তার পেতে হবে। এর জন্য তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করেন তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত শনিবার ওই মহিলাকে প্রথমে শহরের এক বারে নিয়ে গিয়েছিলেন সেনা কর্তা। দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ ধরে মদ্যপান করেছথিলেন। তারপর থানো জঙ্গলের দিকে লং ড্রাইভে যান। জঙ্গল আসতেই, এক নির্জন জায়গা দেখে নেপালি মহিলাকে হাতুড়ি নিয়ে আক্রমণ করেন লেফটন্যান্ট কর্নেল রামেন্দু উপাধ্যায়। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করেছিলেন। এরপর, দেহটি রাস্তার ধারে ফেলে শহরে ফিরে এসেছিলেন তিনি। পরের দিন, কিছু গ্রামবাসী ওই মহিলার দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ সহজেই ওই সেনা কর্তার গাড়িটি শনাক্ত করে। হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই, অভিযুক্ত সেনা কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ আরও জানিয়েছে, জেরার মুখে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। এই ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য শিলিগুড়ি পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে দেরাদুন পুলিশ।