নয়া দিল্লি: করোনার (COVID-19) চোখ রাঙানি এড়িয়ে সবে স্কুলে যাওয়া শুরু হয়েছিল। বায়ুদূষণের (Air Pollution) প্রকোপে ফের অনলাইন ক্লাসেই বন্দি দিল্লির পড়ুয়ারা। দীপাবলির পর দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে বায়ুদূষণ ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছেছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে ও রাজ্যবাসীর সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই আপাতত এক সপ্তাহের জন্য দিল্লির সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল (Arvind Kejriwal)।
সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নবাণের পরই শনিবার তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া (Manish Sisodia), স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দর জৈন (Satyendar Jain), পরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাই (Gopal Rai) ও রাজ্যের মুখ্যসচিব। টানা কয়েক ঘণ্টা বৈঠক চলার পরই রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, সোমবার থেকে সাতদিনের জন্য দিল্লির সমস্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। সরকারি দফতরগুলিতেও বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামী সাতদিনের জন্য।
নির্মাণকাজে (Construction Work) সবথেকে বেশি ধুলিকণা উৎপন্ন হওয়ায় আগামী ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর অবধি দিল্লি জুড়ে সমস্ত রকমের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে দু’দিনের জন্য লকডাউন জারি করার পরামর্শ দেওয়া হলেও আপাতত সেই সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন সকালেই সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ে একটি মামলার শুনানি শুরু হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে কী কী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। কড়া ধমক দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বলেন, “আপনারা সকলেই দেখতে পারছেন কী পরিস্থিতি। আমাদের বাড়ির ভিতরেও মাস্ক পরতে হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ হিসাবে আপনাদের কী পরিকল্পনা? দুদিনের লকডাউন? দিল্লির বাতাসের গুণমান কমাতে আপনাদের জরুরিভিত্তিতে কী পরিকল্পনা রয়েছে?”
সূত্রের খবর, চার ধাপে দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। এরমধ্যে গোটা শহর জুড়ে লকডাউনের পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে এখনই সেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না অরবিন্দ কেজরীবাল। শনিবার বৈঠক শেষেই মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে। অনলাইনেই সমস্ত ক্লাস চলবে, যাতে শিশুদের দূষিত বাতাসের মাঝে উন্মুক্ত না হতে হয়। আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর অবধি সমস্ত নির্মাণ কাজও বন্ধ রাখা হবে।”
তিনি আরও জানান, আগামী এক সপ্তাহের জন্য সরকারি অফিসগুলিতেও সমস্ত কাজ বাড়ি থেকেই পরিচালিত হবে। ১০০ শতাংশ কর্মীই বাড়ি থেকে কাজ করবেন। বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও অনুরোধ করা হচ্ছে তারাও যেন যথাসম্ভব কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
দীপাবলির পরদিন থেকেই দিল্লি ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে দূষণ চরম মাত্রায় পৌঁছয়। বিগত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সেই দূষণের রেশই জারি রয়েছে। টানা চার-পাঁচদিন ধরে বাতাসের গড় গুণমান “বিপজ্জনক” পর্যায়েই ঘোরাফেরা করছে। বাজি পোড়ানোর পাশাপাশি ক্ষেতে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো থেকেও ব্যাপক পরিমাণে বায়ু দূষণ হয়েছে। সকাল থেকেই ধোঁয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে গোটা দিল্লির আকাশ। বিগত ছয়দিন ধরে দিল্লির বাতাস “বিপজ্জনক” (Severe) পর্যায়েই ছিল, মাঝের দুদিনই তা কেবল “অত্যন্ত খারাপ” (Very Poor) পর্যায়ে নেমে আসে। গতকাল থেকেই তা ফের “বিপজ্জনক” মাত্রাতেই ফিরে গিয়েছে।
এ দিন সকালেই দিল্লিতে বাতাসের গুণমান ৪৭০-এ পৌঁছয়। ঘন ধোঁয়াশার আস্তরণে গোটা শহরই ঢাকা পড়ে যাওয়ায় পথেঘাটে গাড়ি চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। দিল্লির পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রাম, নয়ডা ও গাজিয়াবাদেও একই পরিস্থিতি ছিল।
উল্লেখ্য, বায়ু মান সূচকের মান শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তাকে “ভাল” পর্যায়ে রাখা হয়, যা শ্বাস নেওয়ার পক্ষে ভাল। ৫১-১০০ হলে তা “মাঝারি” পর্যায়ে রাখা হয়। ১০১-১৫০ হলে তা খারাপ হিসাবেই গণ্য করা হয়। যাঁদের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের পক্ষে এই বাতাস অস্বাস্থ্যকর বলেই গণ্য করা হয়। বায়ু মান সূচক ১৫১-২০০ হলে তাকে “অস্বাস্থ্যকর” বা “খারাপ” পর্যায়ে রাখা হয়, যা সকলের পক্ষেই অস্বাস্থ্যকর। সূচক ২০১-৩০০ হলে, তাকে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসাবে গণ্য করা হয়। ৩০১-৫০০ হলে সেই বাতাসকে বিপজ্জনক হিসাবে গণ্য করা হয়।
দিল্লি-এনসিআর এলাকায় পিএম ২.৫ (এক ধরনের দূষিত কণা যা ফুসফুসের ক্ষতি করে) মাত্রা ৩০০ পার করেছিল। শুক্রবার বিকেলে তার মাত্রা ছিল ৩৮১, যেখানে সুরক্ষিত মাত্রা হল প্রতি কিউবিক মিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম। পিএম ১০-র মাত্রাও বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি কিউবিক মিটারে ৫৭৭ মাইক্রোগ্রামে।