নয়া দিল্লি: সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সলমন খুরশিদ। নাম সানরাইজ় ওভার অযোধ্যা। আর এই বই নিয়েই কার্যত তোলপাড় হচ্ছে দিল্লির রাজনীতি। ওই বইতে আইসিস এবং হিন্দুত্বকে সমান্তরালভাবে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলছে একাংশ। আর এরই মধ্যে বইটির প্রকাশনা, বিক্রি,বিলি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক ব্যক্তি। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে পাটিয়ালা হাউস আদালত। আদালতের বক্তব্য, এই বই প্রকাশনা, বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলে তা লেখকের বাক স্বাধীনতার অধিকারের উপর আঘাত করা হবে।
পাটিয়ালা হাউস আদালতের বিচারক প্রীতি পারেয়া জানিয়েছেন, অভিযোগকারী নিজের পক্ষে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারেননি, যাতে এই মত তাঁর পক্ষে যেতে পারে। সেই কারণে, এই আবেদন খারিজ করা হয়েছে। বিচারক আরও জানিয়েছেন, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তারও একইরকমভাবে বই লেখার কিংবা ছাপানোর অধিকার রয়েছে। অভিযোগকারী বইটি বা বইটির কথিত “আপত্তিকর” অংশগুলির জন্য তাঁর কী অসুবিধার সৃষ্টি হবে তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি৷ অন্যদিকে, বইটির উপর নিষেধাজ্ঞা আনা হলে, প্রকাশকদের জন্য তা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে এবং লেখকের বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারকেও খর্ব করবে।
তবে অভিযোগকারী সব সময় এই বইয়ের বিরুদ্ধে তাঁর নিজস্ব প্রচার করতে পারবেন। এমনকী তাঁর অনুভূতিতে আঘাত করেছে এমন অনুচ্ছেদকে খণ্ডন করে নিজস্ব লেখনীও প্রকাশ করতে পারেন বলে জানিয়েছে পাটিয়ালা হাউজ আদালত।
উল্লেখ্য, মামলাকারী তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, বইটির উদ্ধৃতাংশ পড়ে তিনি চমকে উঠেছেন। সেখানে হিন্দুত্বকে আইসিস এবং বোকো হারামের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। মামলাকারীর অভিযোগ, এটি যে শুধুমাত্র হিন্দুদের আবেগকেই উস্কে দিচ্ছে, এমনটাই নয় বরং বিপুল সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে এই বই।
আদালতে বইটির ওই উদ্ধৃতাংশের একটি কপিও জমা করা হয়েছিল। বিচারক ওই উদ্ধৃতাংশ দেখে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র একটি উদ্ধৃতাংশ দেখে এটা বোঝা যায় না যে কোন প্রেক্ষাপটে ওই কথাগুলি লেখা হয়েছে। মামলাকারী আরও অভিযোগ ছিল, এই বইয়ের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে দানবীয় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের নৈনিতালের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল একদল উত্তেজিত জনতা। সলমন খুরশিদের ফেসবুকে যে ভিডিয়োটি শেয়ার করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। দুজন ব্যক্তি বালতি বালতি জল ছুড়ে ওই আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তার নতুন বই, “সানরাইজ ওভার অযোধ্যা: নেশনহুড ইন আওয়ার টাইমস” প্রকাশ করার পর থেকেই বিতর্কের শিরোনামে। বিতর্কের কেন্দ্রে বইটির একটি অংশ। সেখানে বলা হয়েছে, “ঋষি ও সাধুদের কাছে পরিচিত সনাতন ধর্ম এবং ধ্রুপদী হিন্দুধর্মকে ‘হিন্দুত্বের একটি শক্তিশালী সংস্করণ’ দ্বারা একপাশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যা সমস্ত মানদণ্ডে আইসিস এবং জিহাদি ইসলামিক গোষ্ঠীর মতো একটি রাজনৈতিক সংস্করণ।”