নয়া দিল্লি : মহাত্মা গান্ধী এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের দুই স্তম্ভ। একজন বেছে নিয়েছিলেন অহিংসার পথ। আর একজন সশস্ত্র সংগ্রাম। দুই ভিন্ন মেরু। কিন্তু কোথাও না কোথাও দেশের প্রতি তাঁদের ভালবাসাটা, দুই ভিন্ন মেরুর মানুষকে এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছে। কিন্তু জানেন কি নেতাজির সঙ্গে গান্ধীজির সম্পর্ক কেমন ছিল? এবার সেই নিয়েই মুখ খুললেন সুভাষ কন্যা অনিতা বসু পাফ।
সম্প্রতি বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের এক ‘বেফাঁস’ মন্তব্য গোটা দেশে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। কঙ্গনার বক্তব্য, মহাত্মা গান্ধী এবং জওহরলাল নেহরু মিলে নেতাজিকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গেই ইন্ডিয়া টুডেকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুভাষ কন্যা। সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর সম্পর্কটা আর পাঁচটা সম্পর্কের মতো ছিল না। গান্ধীজি বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি নেতাজিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। অন্যদিকে, নেতাজি আবার গান্ধীজিকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন।
সুভাষ কন্যা অনিতা বলেন, “তাঁরা (নেতাজি এবং গান্ধীজি) দুজনেই মহান নায়ক ছিলেন, যাঁরা ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। একজন আরেকজনকে ছাড়া এটি করতে পারতেন না। এটি দু’জনের মধ্যে একটি সমন্বয় ছিল। কিছু কংগ্রেস সদস্য দীর্ঘদিন ধরে যে দাবি করার চেষ্টা করে আসছিলেন – শুধুমাত্র অহিংস নীতির হাত ধরেই ভারতের স্বাধীনতা এসেছে – তা ঠিক নয়। আমরা সকলেই জানি যে নেতাজি এবং আইএনএর পদক্ষেপগুলি ভারতের স্বাধীনতায় কতটা অবদান রেখেছিল।”
পাশাপাশি তাঁর আরও বক্তব্য, “অন্যদিকে, এটা দাবি করাও অযৌক্তিক হবে যে শুধুমাত্র নেতাজি এবং আইএনএ ভারতের স্বাধীনতা এনেছিল। গান্ধীজি এমন একজন যিনি নেতাজি সহ অনেককে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।” আর ভারতের স্বাধীনতা? সেটা কারও একার জন্য নয়, বরং লাখ লাখ মানুষের অবদান রয়েছে ভারতের স্বাধীনতার জন্য। এমনটাই মনে করছেন অনিতা বসু।
পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হওয়ার পরপরই এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কঙ্গনা রানাউত মন্তব্য করেন, “১৯৪৭ সালে ভারতকে স্বাধীনতা নয়, ভিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। আসল স্বাধীনতা এসেছে ২০১৪ সালে।” শুধু তাই নয়, কঙ্গনা রানাউত মঙ্গলবার ইনস্টাগ্রামে একটি সিরিজে দাবি করেছিলেন, সুভাষ চন্দ্র বসু এবং ভগৎ সিং মহাত্মা গান্ধীর কাছ থেকে কোনও সমর্থন পাননি। গান্ধীজির অহিংসার মন্ত্রকে উপহাস করতেও ছাড়েননি অভিনেত্রী। পদ্ম সম্মান প্রাপ্ত অভিনেত্রীর আরও বক্তব্য ছিল, মহাত্মা গান্ধী এবং জওহরলাল নেহরু মিলে নেতাজিকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। আর এই নিয়েই কার্যত তোলপাড় হয়েছে গোটা দেশ। চড়ছে রাজনীতির পারদ। আর এরই মধ্যে সুভাষ কন্যার এই প্রতিক্রিয়া নিঃসন্দেহে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।