নয়া দিল্লি: ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এখনও কোনও সেন্সরশিপ নেই। তার সুযোগ নিয়ে কি যে কোনও অশ্লীল বিষয়বস্তু পরিবেশন করা যায়? জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম টিভিএফ-এ স্ট্রিমিং হওয়া ‘কলেজ রোমান্স’ নামে এক ওয়েব সিরিজ নিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট মন্তব্য, এই প্রশ্নই তুলে দিল। সোমবার, আদালত বলেছে এই সিরিজে ব্যবহৃত ভাষা এতটাই যৌনতাপূর্ণ যে তা মানুষের মনকে কলুষিত করতে পারে। এমনকি, এই সিরিজের ভাষা এতই অশ্লীল যে বিচারপতিকে পর্বগুলি দেখতে ইয়ারফোন ব্যবহার করতে হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে এই ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলিতে সম্প্রচারিত বিষয়বস্তুর ভাষা পরীক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ করতে আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি, আদালত এই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং সিরিজটির অভিনেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর-এর বিষয়ে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছে। বিচারপতি স্বরনা কান্ত শর্মা বলেছেন, “এই ওয়েব সিরিজে ব্যবহৃত ভাষায় অশ্লীলতা এবং যৌনতা এতটাই সুস্পষ্ট, যে এর শক্তিকে কোনওভাবেই খর্ব করা যাবে না এবং এটি মানুষের মনকে, বিশেষ করে যাদের মন সহজেই প্রভাবিত হতে পারে তাদের মনকে বিকৃত ও কলুষিত করতে পারে।”
২০১৮ সালে ইউটিউব, টিভিএফ ওয়েব পোর্টাল এবং মোবাইল অ্যাপে সম্প্রচারিত হয়েছিল ‘কলেজ রোমান্স’ সিরিজটি। গোটা সিরিজ নিয়েই অশ্লীলতার অভিযোগ থাকলেও, প্রথম সিজন-এর পঞ্চম পর্বটি অশ্লীলতার ‘সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে’ বলে অভিযোগ উঠেছিল। পর্বটির নাম ছিল “হ্যাপিলি ফা*ড আপ’। এই পর্বে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে এবং মহিলাদের অশালীন বা অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন এক ব্যক্তি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে টিভিএফ প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, অশ্লীলতা সম্প্রচারের দায়ে টিভিএফের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার আদেশ দিয়েছিল দিল্লির এক নিম্ন আদালত। সেই রায়কে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্মটি। সেই মামলার রায় ঘোষণার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেছে আদালত।
বিচারপতি স্বরনা কান্ত শর্মা বলেন, “আদালতকে চেম্বারে ইয়ারফোনের সাহায্যে পর্বগুলি দেখতে হয়েছে। কারণ ভাষার অশ্লীলতা এতটাই বেশি ছিল যে, এটি আশেপাশের মানুষদের বিস্মিত না করে বা অস্বস্তিতে না ফেলে শোনা যেত না। একজন সাধারণ বিচক্ষণ মানুষ, পেশাদারি জগতে বা জনসমক্ষে, এমনকি বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কী ভাষায় কথা বলে তা মাথায় রাখতে হয়েছে। এই সিরিজে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, সেই ভাষা আমাদের দেশের যুব সমাজ বা এই দেশের নাগরিকরা ব্যবহার করে না। তাই এই ভাষাকে আমাদের দেশের প্রচলিত ভাষা বলা যাবে না।” বিচারপতি আরও জানান, এই ক্ষেত্রে আদালতের কাজটা কঠিন ছিল। কারণ এই ক্ষেত্রে আদালতকে অশ্লীল বিষয়বস্তু এবং বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়েছে।
সব শেষে সিরিজের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে অশ্লীল বিষয়বস্তু এবং যৌন বিষয়বস্তু প্রকাশ বা সম্প্রচারের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধি সংশ্লিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার নিদান দিয়েছে আদালত। এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিলেও অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়নি আদালত।