নয়া দিল্লি: পৃথিবীতে তিনভাগ জল, একভাগ স্থল। ছোটবেলা থেকেই আমরা ভূগোল বই পড়ে এই তথ্য জেনেছি। তবে এই জলের ৯০ শতাংশই পানযোগ্য় নয়। যেটুকু জল রয়েছে, তা আমরা নির্বিচারে খরচ করে চলেছি বিগত বহু দশক ধরে। এবার তারই ফল মিলছে হাতেনাতে। ধীরে ধীরে জলস্তর কমছে। পানীয় জলের সঙ্কট ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। খাবার না খেয়ে ৭ দিন বেঁচে থাকা সম্ভব হলেও, পানীয় জল ছাড়া একদিন টিকে থাকাও দুষ্কর। খরা দেখা দিলে কি হা-পিত্যেশ করে মরতে হবে সকলকে? এই ভয় হয়তো দূর হতে চলেছে। সমুদ্রমন্থন করে এবার হয়তো সত্যিই অমৃত মিলতে চলেছে। সমুদ্রের জলেই মিটবে তেষ্টা। আর এই অসাধ্য সাধণ করছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরাই। সমুদ্রের লবণাক্ত জলকে পানীয় জলে পরিণত করার প্রচেষ্টা চলছে জোরকদমে।কীভাবে জানেন?
চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওসান টেকনোলজি (NIOT)-র একটি গবেষকদল ঘরের তাপমাত্রায় সমুদ্রের জলকে পানীয় জলে পরিণত করছে। বিশ্বে এই প্রথম এমন উদ্যোগ। এই জলের উৎপাদন খরচ হবে লিটার প্রতি মাত্র ৬৫ পয়সা থেকে ১ টাকা!
এনআইওটি-র বানানো এই প্ল্যান্টের নাম- ‘লো-টেম্পারেচার থার্মাল ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট’ বা, ‘এলটিটিডি’। ইতিমধ্যেই প্ল্যান্ট বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। লাক্ষাদ্বীপের কারাভাত্তি, মিনিকয় ও আভাত্তি দ্বীপে এই প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। এছাড়া লাক্ষাদ্বীপের আন্দ্রথ, আমিনি, কাদামাত, কিলতান, কালপানি ও চেতলাত দ্বীপেও এই প্ল্যান্ট তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এনআইওটি-র বিশিষ্ট সমুদ্রবিজ্ঞানী রামান্না মূর্তি জানিয়েছেন, সমুদ্র থেকে ৫০০ মিটার গভীর থেকে জল তোলা হবে। ৬০০ মিটার পরিধি থেকে সমুদ্রগর্ভের ৪০০ মিটার নীচ থেকে খুব ঠান্ডা (যেখানে তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস), সেখান থেকে লবণাক্ত জল তুলে এনে তার সঙ্গে মেশানো হবে ভূস্তরের জলকে। লাক্ষাদ্বীপ লাগোয়া ৬০০ মিটার দূরে সমুদ্রগর্ভ থেকে তোলা হবে জল। ১১৫০ মিটার পাইপে সমুদ্র থেকে জল আসবে পরিশোধন প্ল্যান্টে। এখান থেকে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট প্ল্যান্টে জল পরিশোধন করা হবে। এখানেই জল লবণমুক্ত করার প্রক্রিয়া হবে।
জল লবণমুক্ত করার পর ওই জল যাবে ভূ-গর্ভস্থ প্ল্যান্টে। পরিশুদ্ধ জল ভূগর্ভস্থ প্ল্যান্ট থেকে কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্ল্যান্টে পাঠানো হবে। গুণমান পরীক্ষা করার পর তা ঘরে ঘরে সরবরাহ করা হবে।
সমুদ্র মন্থন করে তুলে আনা পানীয় জল আপাতত লাক্ষাদ্বীপেই সরবরাহ করার পরিকল্পনা। ওই দ্বীপগুলিতে দৈনিক দেড় লক্ষ লিটার করে জল সরবরাহ করা হবে। সেই পানীয় জলের দাম পড়বে সামান্যই। কোথায় জল উৎপাদন করা হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করবে জলের দাম। কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে হলে, তার দাম কিছুটা কম পড়বে। যেহেতু সাগর-মহাসাগর হাতের নাগালে। ঘিঞ্জি শহর বা মরুভূমিতে তার দাম হবে একটু বেশি। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের দামে তারতম্যের জন্যও পানীয় জলের দামে কিছুটা তারতম্য ঘটবে। তবে সেই পানীয় জলের দাম লিটার পিছু ৬৪ পয়সা থেকে খুব বেশি হলে ১ টাকার মধ্যেই থাকবে। এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের।