নয়া দিল্লি: সব জল্পনার অবসান। দেশ পাচ্ছে প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি। প্রত্যাশা মতোই বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিপুল ভোটে জয়ী হলেন শাসক জোটের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। ১০ ঘণ্টার গণনার শেষে তাঁকেই ‘রাষ্ট্রপতি-নির্বাচিত’ হিসাবে ঘোষণা করলেন এই নির্বাচনের মুখ্য রিটার্নিং অফিসার তথা রাজ্যসভার সচিব পিসি মোদী। শেষ পর্যন্ত ৬৪ শতাংশেরও বেশি, মোট ২৮২৪ টি প্রথম পছন্দের ভোট পেলেন দ্রৌপদী, যার ভোট-মূল্য ৬,৭৬,৮০৩। দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে প্রয়োজন ছিল ৫ লক্ষ ৪৩ হাজারের বেশি ভোটমূল্য। তৃতীয় রাউন্ডের শেষেই দ্রৌপদী পেয়েছিলেন, ৫৩ শতাংশ ভোট, যার ভোটমূল্য ছিল ৫,৭৭,৭৭৭। আর তাঁর প্রতিপক্ষ, বিরোধীদের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা সব মিলিয়ে পেয়েছেন মাত্র ১,৮৭৭টি প্রথম পছন্দের ভোট পেয়েছেন, যার মূল্য ৩,৮০,১৭৭।
বস্তুত, এদিনের সম্পূর্ণ গণনা প্রক্রিয়াকেই আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এমনিতেই ক্ষমতাসীন এনডিএ-র হাতে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের থেকে মাত্র কয়েক হাজার ভোট কম ছিল। তার উপর, দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করার পর, বিজেডির মতো কিছু জোট নিরপেক্ষ দল (যারা এনডিএ এবং বিরোধী কোনও দিকেই নেই) এবং শিবসেনার মতো কিছু বিরোধী দলও এনডিএ প্রার্থীকেই সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সব মিলিয়ে, ৩৪টি দল বিরোধী প্রার্থী, যশবন্ত সিনহা এবং ৪৪ টি দল দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছিল। ফলে, তাঁর জয় কার্যত নির্বাচনের আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।
এদিন একেবারে প্রথম রাউন্ডের গণনা থেকেই এগিয়ে ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। দুপুর দেড়টা নাগাদ সংসদ ভবনে গণনা শুরু হয়। তবে, গণনা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল সকাল ১১টায়। গণনা শুরুর আগে, সমস্ত রাজ্যের ব্যালট বাক্সগুলি খোলা হয়। প্রথমেই গণনা করা হয় সংসদের ভোট। গত সোমবার (১৮ জুলাই) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংসদে মোট ৭৪৮ জন ভোট দিয়েছিলেন। দুই কক্ষের সাংসদদের পাশাপাশি ৯ জন বিধায়ক সংসদে ভোট দেন। এর মধ্যে ৭২ শতাংশ অর্থাৎ, ৫৪০টি ভোট পান দ্রৌপদী মুর্মু। যশবন্ত সিনহা পান ২০৪টি ভোট।
দ্বিতীয় রাউন্ডে গোনা হয় অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, অসম, বিহার, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ড – এই ১০টি রাজ্যের ভোট। এই রাউন্ডে ব্যবধান আরও বাড়ান দ্রৌপদী। ১০ রাজ্যের ভোট গণনা শেষ হওয়ার পরে, দ্রৌপদী মুর্মুর মোট ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ১,৩৪৯। এর মূল্য ৪,৮৩,২৯৯ টি ভোট। যশবন্ত সিনহা পান ৫৩৩ ভোট, যার মূল্য ১,৮৯,৮৭৬। অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য থেকে বিশেষ করে প্রায় সবকটি ভোটই পান দ্রৌপদী মুর্মু।
ওড়িশার রায়রাংপুরে জন্ম দ্রৌপদীর। গণনা শেষ হওয়ার আগে থেকেই সেখানে উৎসব শুরু হয়ে যায়। ভারতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হচ্ছেন গ্রামের মেয়ে, এর জন্য মোট ২০ হাজার মিষ্টি তৈরি করা হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের পর উপজাতীয় নাচ এবং বিজয় মিছিলে উদযাপন করা হচ্ছে তাঁদের ঘরের মেয়ের এই জয়। একসময় ওড়িশায় স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন দ্রৌপদী। সেখান থেকে রাজ্যের বিজেপি-বিজেডি জোট সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। পরে, ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপালের দায়িত্বও সফলভাবে সামলেছিলেন। এবার দেশের সর্বোচ্চ নেতা হলেন আদিবাসী পরিবারের এই মহিলা। আগামী ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে রামনাথ কোভিন্দের। এর একদিন পর, ২৫ জুলাই শপথ নেবেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।