মসনদের লড়াই। কারা থাকবে ক্ষমতায়? একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখেছে ২০২২। এবার নজরে ২০২৩। এ বছর ভোটের বাদ্যি বাজবে একাধিক রাজ্যে। স্থির হবে আগামী পাঁচ বছর রাজ্যগুলির মসনদে থাকবে কারা। বিধানসভা নির্বাচন হবে ৯টি রাজ্যে। এই রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক এবং তেলঙ্গানা। আর উত্তর-পূর্ব ভারতের চারটি রাজ্য- ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজ়োরামে ভোট রয়েছে। এছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরেও ২০২৩ সালে বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ় ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, ২০২৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাঘেলকে সামনে রেখেই লড়াই করবে কংগ্রেস। তবে রাজস্থান নিয়ে কংগ্রেসের মাথাব্যথা বাড়বে। এখন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। কিন্তু, সচিন পাইলটের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কথা আর চাপা নেই। শীর্ষ নেতৃত্বও তা জানে। এমনকি, রাজস্থানের একাধিক বিধায়কও পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। এই পরিস্থিতিতে কাকে সামনে রেখে রাজস্থানে কংগ্রেস লড়াই করে, সেটাই দেখার। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই দুই রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরে আসতে মরিয়া বিজেপিও।
কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশে এই মুহূর্তে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। তবে ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় তারা কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের পর কমল নাথের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু, বেশিদিন সরকার ধরে রাখতে পারেনি। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেন। যার জেরে কংগ্রেস সরকার ভেঙে যায়। শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে মধ্যপ্রদেশে সরকার গঠন করে বিজেপি। জ্যোতিরাদিত্য এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ফলে বিজেপির আশা, এবার তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করবে।
২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কর্নাটকে কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিজেপির বি এস ইয়েদুরাপ্পা মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথবাক্য পাঠ করেন। কিন্তু, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করে জেডিএস। মুখ্যমন্ত্রী হন এইচ ডি কুমারস্বামী। কিন্তু, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সরকার ভেঙে যায়। কর্নাটকে ফের ক্ষমতায় আসে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হন বি এস ইয়েদুরাপ্পা। কিন্তু, ২০২৩ সালের নির্বাচনকে মাথায় রেখে ২০২১ সালে দক্ষিণের এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল করে বিজেপি। ইয়েদুরাপ্পার জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী হন বাসবরাজ বোম্মাই।
কিন্তু, ইয়েদুরাপ্পার প্রভাবের কথা মাথায় রেখে তাঁকে দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য করা হয়। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে ২০২৩ সালে সরকার গঠনে মরিয়া বিজেপি। এখন দেখার, তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে কি না।
২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে পৃথক রাজ্য হওয়ার পর তেলঙ্গানায় সরকার গঠন করে তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি। মুখ্যমন্ত্রী হন কে চন্দ্রশেখর রাও। ২০১৯ সালে এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সরকার ভেঙে দিয়ে ভোট এগিয়ে আনেন কে সি আর। ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে কে সি আর ফের মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে কে সি আর নিজের দলের নাম বদলে রেখেছেন ভারত রাষ্ট্র সমিতি। তবে বিজেপির দাবি, বিধানসভা নির্বাচনেই পরাজিত হবেন কে সি আর।
নতুন বছরে উত্তর-পূর্বের চার রাজ্যে ভোট রয়েছে। ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজ়োরাম। ত্রিপুরায় ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। নির্বাচনকে মাথায় রেখে গেরুয়া শিবির এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে। বিপ্লব দেবের জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মানিক সাহা। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, মানিক সাহাকে মুখ করেই ২০২৩ সালে নির্বাচনে লড়াই করবে বিজেপি।
মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে বিজেপি জোট সরকারে রয়েছে। আর মিজ়োরামে সরকারে রয়েছে মিজ়ো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এই চার রাজ্যে ভোটের দিকে বাড়তি নজর থাকবে গেরুয়া শিবিরের।
এই ৯টি রাজ্য ছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরেও বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে। এই মুহূর্তে কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কিন্তু, কেন্দ্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি অনুকূল হলে সেখানে নির্বাচন ফিরিয়ে আনা হবে। ফলে নতুন বছরে উপত্যকায় ভোট হয় কি না, সেদিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশে মূলত লড়াই হবে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। কর্নাটকে ত্রিমুখী লড়াই। বিজেপি, কংগ্রেস ও জেডিএস। একইরকমভাবে ত্রিমুখী লড়াই হবে তেলঙ্গানা ও ত্রিপুরাতে। তেলঙ্গানায় প্রধান তিনটি দল টিআরএস, কংগ্রেস ও বিজেপি। আর ত্রিপুরায় লড়াই হবে বিজেপি, কংগ্রেস ও বামেদের মধ্যে।