কলকাতা: টেকনোলজি ডি-লেড ইজ টেকনোলজি ডি-নায়েড। প্রযুক্তি গ্রহণে দেরির অর্থ প্রযুক্তিকে অস্বীকার করা। আমরা সেদিকেই হাঁটছি। দেশের প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেছেন বায়ুসেনা প্রধান। বুধবার বায়ুসেনার অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং। সেখানেই ছকের বাইরে বেরিয়ে বেশ কয়েকটা কথা বললেন। এক, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উত্পাদনে আমরা অনেক, অনেক পিছিয়ে। পিছিয়ে ছিলাম এবং আরও পিছিয়ে পড়ছি। দুই, তেজস যুদ্ধবিমান পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে, বায়ুসেনা জানে না। তিনি বললেন, ২০১০ সালে ৪০টি তেজসের বরাত দেওয়া হয়। ১৪ বছর পরেও ওই ৪০টি বিমান হাতে আসেনি। তিন, ১৯৮৪ সালে তেজস তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ২০১৬ সালে প্রথম বিমান বায়ুসেনার হাতে আসে। ৩২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। অর্থাৎ, আমরা এখনও বছরে দু’টির বেশি তেজস তৈরি করতে পারছি না।
বায়ুসেনা প্রধানের প্রশ্ন, এই অবস্থায় বায়ুসেনা আর কী আশা করতে পারে? যা দেখে অনেকেই বলছেন, বায়ুসেনা প্রধান আরও অনেক কিছুই বলতে পারতেন। বলেননি। যতটা বলেছেন, যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিয়েছেন। সাফ বলে দিয়েছেন, শুধু হ্যালের মতো সরকারি সংস্থাকে দিয়ে চলবে না। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উত্পাদনে বেসরকারি লগ্নি, বেসরকারি প্রযুক্তি প্রয়োজন। অনেক বেশি টাকা ঢালতে হবে। স্পষ্ট বুঝিয়েছেন, সময় চলে যাচ্ছে। শক্ররা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে।
এরইমধ্যে ২৫ ডিসেম্বর দু’দিনের ব্যবধানে দু’টি যুদ্ধবিমান উড়িয়ে চমক দেয় চিন। পিপলস লিবারেশন আর্মি দাবি করেছে, ওর মধ্যে একটি সিক্সথ জেনারেশন যুদ্ধবিমান। যা কিনা এই মুহূর্তে আমেরিকার কাছেও নেই। জে-থার্টি ফাইভ এ’র মতো আধুনিক যুদ্ধবিমানও চিনের ভাঁড়ারে আছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পাকিস্তান, চিনের থেকে ৪০টি জে-থার্টি ফাইভ এ’ যুদ্ধবিমান কিনতে চেয়েছে। মার্চ- এপ্রিলেই চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা। এমতাবস্থায়, ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে ৪২ স্কোয়াড্রন অ্যাকটিভ এয়ারক্রাফট থাকা প্রয়োজন। আছে মাত্র ৩৩ স্কোয়াড্রন। বিষয়টা উদ্বেগজনক আঁচ করেই বারবার প্রতিরক্ষামন্ত্রকের কাছে দরবার করছে বায়ুসেনা।
এমনকি গত সপ্তাহে এনিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা সচিবকে চিঠি বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী- অফিসাররা। সবাই একটা বিষয়ে একমত। এই মুহূর্তে অন্য সব পাশে সরিয়ে বিদেশ থেকে যুদ্ধবিমানের বরাত দিতে হবে। তবে তাঁরা এটাও বলছেন যে অর্ডার দিলেই তো রাতারাতি যুদ্ধবিমান হাতে এসে যাবে না। সেই প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তবু বিদেশ থেকে যুদ্ধবিমান কেনা ছাড়া গতি নেই। প্রতিরক্ষামন্ত্রক কী ভাবছে বা করছে? ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিমানের ঘাটতি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র। ২৩ ডিসেম্বর কমিটির কথা ঘোষণা হয়েছিল। তারপর যদিও ১৫ দিনেও কমিটির খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হয়নি। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত জল কোনদিকে গড়ায়।