বিদ্রোহী কৃষকরা। ন’মাস ধরে আন্দোলনের পরে এবার ব্যারিকেড ভাঙল কৃষকরা। হরিয়ানার অম্বালার কাছে শম্ভু সীমানায় দীর্ঘ ছ’মাস ধরে ক্যাম্প করে এমএসপি-এর দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু সরকারের পক্ষে থেকে কোনও সদুত্তর আসেনি। তাই শীতকালীন অধিবেশন চলার সময় দিল্লি অভিযানের ডাক দেয় কৃষকরা।
আন্দোলনরত কৃষকরাই পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে হরিয়ানা সীমান্তে। সেই কারণে এক কৃষককে আটক করেছে পুলিশ। কৃষকদের দাবি এমএসপির প্রতি আইনি গ্যারান্টি সহ তাদের অনান্য দাবি মেনে নেওয়া। এর পরেই নরম হয়েছে সরকার, যারা এই বছরের শুরুতে কৃষকদের কৃষকদের সুর। এর আগেও এই দাবি নিয়ে আন্দোলনের জেরে আলোড়ন উঠেছিল রাজধানী সহ পঞ্জাব, হরিয়ানা সহ একাধিক রাজ্যে। যার জেরে পিছপা হতে হয়েছিল সরকারকে। চার দফা আলোচনা হয় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের। কিন্তু তারপরেও সমস্যার সমাধান হয়নি, তাই ফের আন্দোলনের পথে নেমেছে কৃষকরা। এই অশান্তির আবহেই সরকার জানিয়েছে আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য দরজা সবসময় খোলা আছে।
প্রসঙ্গত, MSP-এর আইনি গ্যারান্টি চেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি এবং ২১ ফেব্রুয়ারি দিল্লি অভিযানের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে শম্ভু এবং খানৌরিতে নিরাপত্তা বাহিন সেখানেই আটকে দেয় তাঁদের। সেই সময় থেকেই তাঁরা সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা (অরাজনৈতিক) এবং কিষাণ মজদুর মোর্চা-এর নেতৃত্বে শম্ভু এবং খানৌরি সীমান্তে ক্যাম্প করে অবস্থানে বসে কৃষকরা।
এরপরেই আজ পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কৃষকরা। প্রথম স্তরের ব্যারেকেড ভেঙে ফেললেও কংক্রিটের ব্লক, লোহার পেরেক ও কাঁটাতারের দেওয়া ব্যারিকেডের সামনে এসে আটকে যায় তাঁরা।
কৃষক নেতা সুরজিৎ সিং ফুল, সাতনাম সিং পান্নু, সাবিন্দর সিং চৌতালা, বলজিন্দর সিং চাদিয়ালা এবং মনজিৎ সিং-এর নেতৃত্বে ১০১ জন কৃষকের একটি প্রতিনিধি দল দুপুর ১টা নাগাদ সংসদের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেছেন। কৃষক নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের হরিয়ানা সীমান্তে বাকিদের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
কৃষক আন্দোলনকে বানচাল করতে প্রস্তুত প্রশাসনও। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অম্বালায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। কৃষকদের মোকাবিলা করার জন্য সুবিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। প্রশাসনের তরফে পাঁচ বা তার বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এমএসপি-এর আইনি গ্যারান্টি সহ ঋণ মুকুব, কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের জন্য পেনশন এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি না করার মতো একাধিক দাবি রয়েছে কৃষকদের। ২০২১ সালের লখিমপুর খেরি হিংসার ঘটনার শিকারদের ‘ন্যায়বিচার’ দাবি তুলেছেন কৃষকরা। ভূমি অধিগ্রহণ আইন, ২০১৩ পুনঃস্থাপন এবং ২০২০-২১ সালে পূর্ববর্তী আন্দোলনের সময় নিহত কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
কঠিন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসনও। অম্বালার এসপি এবং আইজিপি নিজে এসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্ষতিয়ে দেখেছেন। বৃহস্পতিবার কৃষকদের আটকাতে আধাসেনা, ড্রোন থেকে জলের ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা অনুযায়ী ১৬৩(সাবেক ১৪৪ ধারা) ধারা লাগু করা হয়েছে। হরিয়ানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিল্লি পুলিশ অনুমতি না দিলে আন্দোলনরত কৃষকদের রাজধানীতে যেতে দেবে না প্রশাসন। সরকারি এবং বেসরকারি সব স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কৃষক নেতা সারওয়ান সিং পান্ধার বলেন, “আমরা সরকারের কাছে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, আন্দোলন করার অধিকার দেওয়ার অনুরোধ করছি।”